নবুওয়াতের মানদণ্ড: মুহাম্মদ কি সত্যিই নবী ছিলেন? (পর্ব-০১)

নৈতিকতা ও চরিত্র হচ্ছে নবুওয়াতের ভিত্তিগত এক মানদণ্ড। একজন “ঈশ্বরপ্রেরিত” ব্যক্তি শুধু ধর্মীয় বার্তা নয়, নিজের জীবনের মাধ্যমে সেই বার্তার প্রতিফলনও ঘটাবেন—এইটাই তো ধারণা। তাই এই পয়েন্টে আমরা মুহাম্মদের নৈতিকতা ও চরিত্রের বিশ্লেষণ করব এবং তুলনা করব আব্রাহাম, মোশি ও যীশুর সঙ্গে।

 

আব্রাহাম (ইব্রাহিম): বিশ্বাসের প্রতীক, নাকি অন্ধ আনুগত্যের মূর্তি?


আব্রাহামকে প্রায়ই "বিশ্বাসের জনক" বলা হয়। বাইবেল এবং কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী, ঈশ্বর যখন তাঁকে আদেশ করেন তাঁর ছেলেকে কোরবানি দিতে, তিনি বিনা প্রশ্নে প্রস্তুত হন।


এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আব্রাহামের নৈতিকতা সম্পর্কে দুই ধরনের ব্যাখ্যা আসে:

1. ধার্মিক দৃষ্টিকোণ: ঈশ্বরের প্রতি একনিষ্ঠ আনুগত্য ও নিঃশর্ত বিশ্বাসের প্রমাণ।

2. যুক্তিবাদী দৃষ্টিকোণ: একজন বাবা কিভাবে ঈশ্বরের নামে নিজের ছেলেকে হত্যা করতে পারেন? এ কি একধরনের নৈতিক পরাজয়?


অতএব, আব্রাহামের নৈতিকতা সরল ও ঈশ্বর-কেন্দ্রিক, কিন্তু তা প্রশ্নাতীত নয়। তিনি মানবতাকে নয়, ঈশ্বরকে অগ্রাধিকার দেন।

 

মোশি (মূসা): কঠোর নেতা, নাকি ঈশ্বরের হাতিয়ার?


মোশি ছিলেন নেতৃত্বের প্রতীক। তিনি ইজরায়েলি জাতিকে ফেরাউনের দাসত্ব থেকে মুক্ত করেন। কিন্তু তাঁর আচরণ সবসময় নৈতিকতার সর্বোচ্চ মান বজায় রেখেছে কি?


- সুবিচার ও মানবতা:  

  মোশি আইনপ্রণেতা হিসেবে বিখ্যাত (টেন কমান্ডমেন্টস)। কিন্তু তিনি একই সঙ্গে শাস্তির প্রবক্তাও ছিলেন। বাইবেল অনুযায়ী, তিনি ঈশ্বরের আদেশে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেন যারা ‘বিধি লঙ্ঘন’ করেছিল।


- সাম্প্রদায়িকতা ও যুদ্ধনীতি:  

  বাইবেলের ‘Numbers’ অধ্যায়ে দেখা যায়, মোশির নেতৃত্বে মাদিয়ানিদের উপর আক্রমণ চালানো হয়, যেখানে শিশু ও নারীদেরও হত্যা করা হয়েছিল।


তবে মোশির সবকিছুই ঈশ্বরের নির্দেশ অনুযায়ী হয়েছে বলে ধর্মীয়রা মনে করে। কিন্তু একটি প্রশ্ন থেকেই যায়—নবী হিসেবে তাঁর নৈতিকতা কি বিচারযোগ্য নয়?

 

ঈসা (যীশু): ক্ষমাশীলতার চূড়ান্ত রূপ


যীশু, বা ঈসা, ইতিহাসে এমন এক নবীর প্রতিচ্ছবি যিনি একবারও কাউকে হত্যা করেননি, যুদ্ধ করেননি, বরং ভালোবাসা, ক্ষমা, দয়া—এসবের মাধ্যমে মানুষকে পরিবর্তন করেছেন।


- নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি:

  পাপিনী নারীকে পাথর মারা হচ্ছিল, যীশু বললেন, “তোমাদের মধ্যে যে পাপহীন, সে আগে পাথর ছুঁড়ে মারো।” (John 8:7)  

  এই একটি বাক্যে তাঁর নৈতিক অবস্থান স্পষ্ট।


- শত্রুর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি:

  “তোমার শত্রুকেও ভালোবাসো।” (Matthew 5:44)  

  তিনি ক্ষমা করার বার্তা দিয়ে গেছেন বারবার।


- ক্ষমতার ব্যবহার:

  যীশু কখনও রাজার মতো শাসন করেননি। তাঁর ‘রাজত্ব’ ছিল আত্মিক। তাঁর “ঈশ্বরের রাজ্য” একটি নৈতিক আদর্শ।


এই দিক থেকে দেখা যায়, যীশুর নৈতিক অবস্থান অত্যন্ত মানবিক, ক্ষমাশীল ও অহিংস ছিল।


---

মুহাম্মদ: নৈতিকতা নাকি কৌশল?


এখন দেখা যাক মুহাম্মদের চরিত্র।


- প্রথম জীবন:  

  ইসলামী ইতিহাসে বলা হয়, তিনি ‘আল-আমিন’ ছিলেন—সত্যবাদী ও বিশ্বাসযোগ্য। কিন্তু এই দাবি ইতিহাসে যাচাইযোগ্য নয়, বরং এটি মূলত ইসলামি গ্রন্থনির্ভর।


- মদিনার পর জীবন:  

  নবুওয়াতের ১৩ বছর মক্কায় তিনি ছিলেন নিপীড়িত, অহিংস। কিন্তু মদিনায় এসে তিনি রাজনৈতিক নেতা ও সেনাপতিতে পরিণত হন।

 

কয়েকটি বিতর্কিত ঘটনা:


1. বনি কুরাইজা গণহত্যা:  

   মুহাম্মদ যুদ্ধে নিরপেক্ষ থাকা একটি ইহুদি গোত্রকে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে আত্মসমর্পণের পর প্রায় ৬০০-৯০০ জন পুরুষকে হত্যার আদেশ দেন। এটা কি নৈতিক?


2. নারী বন্দীদের বিয়ে/গনিমতের মাল:  

   খায়বার যুদ্ধের পরে সাফিয়া নামক এক নারীর স্বামীকে হত্যা করার পর, মুহাম্মদ তাঁকে নিজের স্ত্রী করেন। এটি ‘দয়া’ না ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’?


3. কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ:  

   কুরআনে বহু আয়াতে বলা হয়েছে, যারা মুহাম্মদকে মানবে না, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। এই বার্তাগুলো কি এক মানবিক নেতার প্রমাণ দেয়?




4. শেষ কথা:

যখন আমরা *নৈতিকতা ও চরিত্র* দিয়ে নবুওয়াত বিচার করতে চাই, তখন যীশু একজন আদর্শ মানদণ্ড হিসেবে দাঁড়ান—তাঁর জীবনে কোনো সহিংসতা নেই, নারীদের প্রতি মানবিক মনোভাব আছে, এবং শত্রুর প্রতিও ক্ষমাশীলতা আছে।


অন্যদিকে মুহাম্মদের জীবন, বিশেষ করে মদিনার পর, রাজনীতি, কৌশল, যুদ্ধ ও ক্ষমতার ঘূর্ণিপাকে গড়ে ওঠে। এতে করে তিনি আদর্শিক নয়, বাস্তববাদী নেতা হয়ে ওঠেন। কিন্তু একজন নবীর কাছে কি আমরা শুধু কৌশল চাই, না আদর্শও চাই?

 নারীদের প্রতি মনোভাব — মুহাম্মদ বনাম আব্রাহাম, মোশি ও যীশু


একজন নবীর আসল চরিত্র বোঝা যায়, তিনি সমাজের সবচেয়ে দুর্বল ও অবহেলিতদের প্রতি কেমন আচরণ করতেন। আর ইতিহাসে সবচেয়ে উপেক্ষিত ও শোষিত শ্রেণি হলো **নারী**। এই কারণে নবীদের নারীদের প্রতি মনোভাব, আচরণ, ও নীতিগত অবস্থান বিশ্লেষণ করা একদম আবশ্যক।


এই পয়েন্টে আমরা দেখব:


- কেমন ছিল আব্রাহাম, মোশি ও যীশুর দৃষ্টিভঙ্গি নারীদের প্রতি?

- কেমন ছিল মুহাম্মদের দৃষ্টিভঙ্গি, আচরণ, ও সিদ্ধান্ত?

- তুলনামূলকভাবে কে কেমন অবস্থানে দাঁড়ান?


---


আব্রাহাম (ইব্রাহিম): নারীর অধিকারহীনতা ও সম্পত্তিগত ব্যবহার


আব্রাহামের দুটি স্ত্রী ছিলেন: **সারা** ও **হাজার**। বাইবেল ও কুরআনের বর্ণনা অনুসারে:


- **হাজার ছিলেন একজন দাসী**, যাকে সারা তাঁকে সন্তান দিতে বলেছিলেন।  

  সুতরাং, হাজার একজন নারী হিসেবে নয়, একজন "সন্তান উৎপাদনের উপকরণ" হিসেবেই ব্যবহৃত হন।


- পরবর্তীতে সারা ও হাজারের মধ্যে বিরোধ হলে, **আব্রাহাম হাজারকে ও তার ছেলেকে মরুভূমিতে তাড়িয়ে দেন**, ঈশ্বরের নির্দেশে।


এই ঘটনা দেখে বোঝা যায়, নারীর প্রতি আব্রাহামের ব্যবহার ছিল সম্পত্তিমূলক ও আনুগত্য-নির্ভর। নারীদের নিজস্ব কোনো মতামতের গুরুত্ব ছিল না।


মোশি (মূসা): নারী মানেই পুরুষের অধীন — বিধানতন্ত্রে নারী নিপীড়ন**


মোশির “টেন কমান্ডমেন্টস” (দশ আদেশ) এর পাশাপাশি, বাইবেলে রয়েছে বহু আইন—যেখানে নারীকে পুরুষের অধীন, অধিকারহীন ও অশুচি হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে।


নারীকে পুরুষের সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়**। এক আজ্ঞায় বলা হয়েছে:  

  তোমার প্রতিবেশীর গৃহ, স্ত্রী, দাস, পশু—কোন কিছুতেই লোভ করবে না।

  —এখানে স্ত্রী, গৃহ, পশু এক লাইনে!


যুদ্ধের সময় নারীদের লুট করে নেওয়ার বিধান ছিল। ‘Deuteronomy 21’ এ বলা হয়েছে:  

  একজন পুরুষ যুদ্ধ থেকে ফিরলে কোনো নারীকে পছন্দ করলে, তাকে নিজের স্ত্রী করতে পারে।


ধর্ষণ ও বিয়ে: ধর্ষণের শিকার নারীকে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার বিধান ছিল—একটি নারকীয় অবিচার।


মোশির নারীনীতি এক কথায়—*পুরুষতান্ত্রিক আইনের ধর্মীয় বৈধতা*।



ঈসা (যীশু): নারীর মর্যাদা ও সম্মান প্রতিষ্ঠায় অগ্রগামী


যীশু ছিলেন এমন এক নবী, যিনি সমাজে নিগৃহীত নারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন নির্দ্বিধায়।


প্রেম, ক্ষমা ও মানবতা:

1. ব্যভিচারিণী নারীর রক্ষা:

   যখন এক নারীকে ব্যভিচারের অভিযোগে পাথর ছুঁড়ে মারার চেষ্টা হয়, যীশু বলেন:  

   *"তোমাদের মধ্যে যে পাপহীন, সে আগে পাথর মারুক।"*  

   —এভাবে তিনি নারীর প্রতি করুণা ও ন্যায়বিচারের বার্তা দেন।


2. সমাজচ্যুত নারীদের সঙ্গে কথা:

   যীশু প্রকাশ্যে সমাজচ্যুত নারীদের সঙ্গে কথা বলতেন (যেমন সামারিয়ান নারী), যা সে সময়ে অগ্রহণযোগ্য ছিল।


3. নারী শিষ্য ও অনুসারী:

   বাইবেল অনুসারে, যীশুর অনুসারীদের মধ্যে বহু নারী ছিলেন। তারা তাঁকে সমান মর্যাদা দিতেন এবং যীশুও তাদের অবজ্ঞা করেননি।


তাঁর কাছে "নারী ছিল আত্মার দিক থেকে পুরুষের সমান"।



মুহাম্মদ: নারী-সম্মান না নারী-কৌশল?


ইসলামী বিবরণ অনুসারে, মুহাম্মদ নারীদের ‘মর্যাদা’ দিয়েছেন। কিন্তু ঐতিহাসিক তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়:


মুহাম্মদের বিয়ে ও নারীদের ব্যবহার:


1. ১১টি স্ত্রী** ছিলেন তাঁর (আয়েশা, খাদিজা, হাফসা, জয়নাব, সাফিয়া, জুয়াইরিয়া, মারিয়া, সৌদা, উম্মে সালামা, উম্মে হাবিবা, রাইহানা)।  

   এর মধ্যে অনেকেই **যুদ্ধবন্দি বা বিধবা** ছিলেন।


2. আয়েশার সঙ্গে বিয়ে:

   হাদীস অনুসারে, মুহাম্মদ আয়েশাকে বিয়ে করেন ৬ বছর বয়সে, সহবাস করেন ৯ বছরে।  

   —এটি আজকের সমাজে কোনোভাবেই নৈতিকতা হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।


3. সাফিয়া বিনতে হুয়াইয়ি:

   তাঁর স্বামী ও পিতাকে খায়বার যুদ্ধে হত্যা করার পর, মুহাম্মদ তাঁকে ‘পছন্দ করে’ স্ত্রী করেন। প্রশ্ন হচ্ছে, এই বিয়ে কি সম্মতির ছিল, না তা **একটি যুদ্ধজয়ের ফল**?


কুরআনের নারী সংক্রান্ত আইন:


1. চার স্ত্রীর অনুমতি + অসীম দাসী:

   কুরআন ৪:৩ — “তোমরা চারটি পর্যন্ত স্ত্রী রাখতে পারো... আর যাদের তোমাদের ডান হাত মালিক হয়েছে (দাসী), তাদেরও উপভোগ করো।”  

   —এখানে নারী শুধু *সম্পত্তি* ও *ভোগ্য বস্তু* হিসেবে চিত্রিত।


2. পুরুষদের স্ত্রীকে প্রহারের অনুমতি:

   কুরআন ৪:৩৪ — “যদি তোমরা স্ত্রীদের অবাধ্যতা আশংকা করো, তবে... তাদের প্রহার করো।”  

   —এই আয়াত নারী নির্যাতনের বৈধতা দেয়।


3. নারীর সাক্ষ্য অর্ধেক:

   কুরআন ২:২৮২ — একটি নারীর সাক্ষ্য সমান নয় একজন পুরুষের; দরকার হয় *দুইজন নারী*।



যুদ্ধে নারীদের ব্যবহার:


1. বনি মুস্তালিক যুদ্ধের পর জুয়াইরিয়া নামক এক বন্দি নারীকে বিয়ে করা হয়।

2. নারী দাসী ও যৌনদাসীর ব্যবহার ইসলামে বৈধ করা হয়েছে মুহাম্মদের আদলে।

3. শেষ কথা:


নারীর মর্যাদা দিয়ে নবীকে বিচার করতে গেলে যীশু একমাত্র ব্যক্তি যাঁর অবস্থান পুরোপুরি নৈতিক ও মানবিক। তিনি কখনো নারীকে ভোগের বস্তু করেননি, বরং পাপী নারীকে বাঁচিয়েছেন, সম্মান দিয়েছেন, অনুসারী করেছেন।


মুহাম্মদের নারী-সম্পর্কিত আচরণ ও ধর্মীয় নীতি **সুস্পষ্টভাবে পুরুষতান্ত্রিক** এবং **ক্ষমতা ও প্রয়োজনে নারীকে ব্যবহার** করার প্রবণতা দেখা যায়। যদিও ইসলামে "নারীদের সম্মান" নিয়ে কথাবার্তা আছে, কিন্তু বাস্তব চিত্র স্পষ্টভাবে ভিন্ন।

পয়েন্ট ৩: সহনশীলতা ও ধর্মীয় বিরোধীদের প্রতি মনোভাব — মুহাম্মদ বনাম আব্রাহাম, মোশি ও যীশু

একজন “সত্যিকারের নবী” তাঁর চারপাশের মানুষদের, বিশেষ করে বিরোধীদের প্রতি কেমন আচরণ করেন—তা তাঁর নৈতিক উচ্চতা প্রকাশ করে। আমরা দেখতে চাই:

- তিনি কি কেবল নিজ ধর্মের মানুষদের ভালোবাসেন?
- না কি তিনি ভিন্নমত, বিরুদ্ধবাদী, এমনকি শত্রুকেও সহনশীলতা দেখান?

এই দৃষ্টিকোণ থেকে এবার আমরা বিশ্লেষণ করব মুহাম্মদ, আব্রাহাম, মোশি ও যীশুর আচরণ এবং মনোভাব।


আব্রাহাম: বিশ্বাসের জন্য লড়াই, কিন্তু সহনশীলতা অনুপস্থিত নয়

আব্রাহামের জীবনীতে দেখা যায়:

- তিনি তার বাবার মূর্তিপূজা পছন্দ করতেন না, এবং তাকে বোঝানোর চেষ্টা করতেন।
- মূর্তি ভেঙে দেওয়ার ঘটনাটি পবিত্র কিতাবসমূহে বিতর্কিত হলেও, মূল বিষয় হলো — তিনি **শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদেই বেশি বিশ্বাসী** ছিলেন।

তবে তিনি **জিহাদ বা ধর্মীয় হত্যা করেননি**, কাউকে হত্যা করেননি বা যুদ্ধ করেননি ধর্মীয় মতাদর্শের জন্য।


মোশি: ঈশ্বরের নির্দেশে নির্মম হত্যাযজ্ঞ

মোশির জীবনে সহনশীলতার চেয়ে **শাস্তিমূলক ধর্মীয় আইন ও সহিংসতা** বেশি প্রকাশ পেয়েছে।

উদাহরণ: সোনার বাছুর পূজার ঘটনা
- যখন ইস্রায়েলীয়রা মূর্তি পূজা করে, তখন মোশি রেগে যান এবং ঈশ্বরের আদেশে **তিন হাজার মানুষকে হত্যা করেন।**  
  _(Exodus 32:27-28)_

নির্দেশ: ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধ্বংস করা
- বাইবেল অনুসারে, মোশির আইন বলে:  
  *"যে শহরে কেউ ভিন্ন ঈশ্বরের পূজা করে, তার প্রতিটি পুরুষ, নারী, শিশু ও পশুকে মেরে ফেলো। শহরটি পুড়িয়ে দাও।"*  
  _(Deuteronomy 13:12-18)_

👉 মোশির ধর্মে সহনশীলতার চেয়ে **ধর্মীয় বিশুদ্ধতা রক্ষায় সহিংসতা** বেশি।


ঈসা (যীশু): বিরোধীদের প্রতি ক্ষমাশীলতা ও ভালোবাসা

যীশু একমাত্র নবী যিনি তাঁর বিরোধীদের বিরুদ্ধে কোনো সহিংসতা চালাননি, বরং:

- **তিনি ভালোবাসা ও ক্ষমার শিক্ষা দেন।**
- **ক্রুশে ঝুলিয়ে মারা হওয়ার আগেও** তিনি বলেন:  
  *"হে পিতা, তাদের ক্ষমা করো; তারা জানে না তারা কী করছে।"*  
  _(Luke 23:34)_

তিনি বলেন:
- *"তোমার শত্রুকে ভালোবাসো, যারা তোমাকে ঘৃণা করে তাদের জন্য প্রার্থনা করো।"*  
  —এটি ছিল তাঁর নৈতিক শিক্ষা।

ধর্মীয় নেতাদের বিরোধিতাও তিনি করতেন যুক্তির মাধ্যমে, কিন্তু কখনো হত্যার মাধ্যমে নয়।

👉 ঈসা ছিলেন *সহনশীলতা, মানবতা ও অহিংসতার* প্রতীক।


মুহাম্মদ: প্রথমে সহনশীলতা, পরে জিহাদ ও নির্মূলনীতি

মক্কা পর্যায়ে (৬১০–৬২২):
- মুহাম্মদ ছিলেন সংখ্যালঘু, তখন তাঁর বার্তায় ছিল ধৈর্য ও সহনশীলতা।
- কুরআনের অনেক আয়াত তখন শান্তির বার্তা দেয়, যেমন:
  - *“তোমার ধর্ম তোমার জন্য, আমার ধর্ম আমার জন্য।”* (কুরআন ১০৯:৬)
  - *“ধর্মে জোরজবরদস্তি নেই।”* (২:২৫৬)

মদিনা পর্যায়ে (৬২২–৬৩২):
- মুহাম্মদের হাতে তখন ছিল **রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষমতা**।
- এই সময়ে সহনশীলতার পরিবর্তে দেখা যায়:
  - **জিহাদ ঘোষণা**।
  - **বিরোধীদের নির্মূল**।
  - **ইহুদি ও খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে আক্রমণ ও বৈষম্য।


ধর্মীয় বিরোধীদের প্রতি মুহাম্মদের বাস্তব আচরণ:

১. কাব ইবনে আশরাফকে হত্যা:
- এই ইহুদি কবি মুহাম্মদের সমালোচনা করে কবিতা লিখেছিলেন।
- মুহাম্মদ তার বিরুদ্ধে **হত্যার নির্দেশ দেন।
  (সূত্র: সাহিহ বুখারী ৪০৩৭)

২. বনি কুরাইজা গণহত্যা:
- মুহাম্মদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে পুরো ইহুদি গোত্রকে ধরা হয়।
- **মুহাম্মদের নির্দেশে প্রায় ৬০০-৯০০ জন পুরুষকে হত্যা করা হয়**, নারীদের বন্দি করে দাসী বানানো হয়।
  (সূত্র: ইবনে ইসহাক, আল-তাবারি)

৩. ‘মুনাফিক’ ও ‘কাফির’ তত্ত্ব:
- যারা মুহাম্মদকে অস্বীকার করত, তাদের কুরআনে অভিশপ্ত বলা হয়েছে:
  > *“তাদের হত্যা করো যেখানেই পাও।”* (২:১৯১, ৯:৫)

৪. ব্যঙ্গকারী নারীকেও হত্যা:
- আসমা বিনতে মারওয়ান নামক এক নারী কবি মুহাম্মদের সমালোচনা করলে, একজন সাহাবা তাকে রাতে ঘরে ঢুকে হত্যা করে।  
  মুহাম্মদ এতে **অসন্তুষ্ট হননি**, বরং হত্যাকারীকে আশীর্বাদ করেন।


উপসংহার: সহনশীলতা ও নৈতিকতার মানদণ্ডে কে এগিয়ে?

- **ঈসা** একমাত্র যিনি বিরোধী, নিন্দাকারী এমনকি শত্রুর প্রতিও ভালোবাসা ও ক্ষমার আদর্শ দেখিয়েছেন।
- **মোশি** ছিলেন কঠোর শাস্তিমূলক আইনপ্রণেতা—ধর্মীয় বিশুদ্ধতার নামে গণহত্যার পক্ষপাতী।
- **মুহাম্মদ** কুরআনে ও নিজের জীবনে সহনশীলতার মুখোশ পরে ক্ষমতা অর্জনের পর **সশস্ত্র ধর্মীয় সহিংসতা** চালিয়েছেন।
- **আব্রাহাম** ছিলেন তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণ, তবে কোনো নৈতিক আদর্শ প্রতিপাদনকারী ছিলেন না।

Post a Comment

Previous Post Next Post