পৃথিবীতে এতো দ্রুত ইসলাম ছড়ানোর কারণ: আল্লাহর রহমত নাকি মুমিনদের বোকামি?


১. ইসলাম গ্রহণ করলে প্রচার, ত্যাগ করলে নীরবতা। এমন দ্বিচারিতা কেন?

মুমিনরা প্রায়ই ইসলাম গ্রহণের কাহিনি প্রচার করতে ভালোবাসে। কোনো খ্রিস্টান, ইহুদি, বা হিন্দু যদি ইসলাম গ্রহণ করে, তাহলে সেটাকে বড় করে সংবাদ প্রচার করা হয়।

কিন্তু যদি কেউ ইসলাম ত্যাগ করে? তখন কোনো মুসলিম মিডিয়া সেটাকে প্রচার করে না, বরং উল্টো তারা একে অস্বীকার করবে বা বলবে, "সে কখনো প্রকৃত মুসলিম ছিল না।"

ইউটিউবে খুঁজলে হাজার হাজার ভিডিও পাওয়া যাবে যেখানে বলা হচ্ছে, "আমেরিকান সৈনিক ইসলাম গ্রহণ করলো!", "একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী মুসলমান হলো!", "খ্রিস্টান পাদ্রী ইসলাম গ্রহণ করলো!"— কিন্তু কখনো কি শুনেছেন, "একজন মাওলানা ইসলাম ছেড়ে দিল!", "একজন হাফেজ নাস্তিক হয়ে গেল!", "একজন মুফতি নাস্তিক হয়ে গেল!" এসব নিয়ে কোনো মিডিয়া কথা বলছে?
না!
বাস্তবে, ইসলাম ত্যাগের হারও অনেক বেশি। বিশেষ করে শিক্ষিত ও স্বাধীনচেতা মানুষের মধ্যে ধর্মত্যাগের প্রবণতা বেশি। কিন্তু মুসলিম সমাজে ধর্মত্যাগীদের ওপর চাপ থাকে, তাদের ভয় দেখানো হয়, এমনকি অনেক দেশে ধর্মত্যাগ করলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। ফলে তারা প্রকাশ্যে নিজেদের কথা বলতে পারে না।

২. ইসলাম ছড়ানোর অন্যতম কারণ: মুসলিমদের অস্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি

মুসলিম বিশ্বে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অত্যন্ত বেশি। এর প্রধান কারণ হলো। ধর্মীয় চেতনা, পরিবার পরিকল্পনার অভাব, এবং অর্থনৈতিক দুর্বলতা। তাদের পেটে ভাত থাকে না, কিন্তু সন্তান ঠিকই থাকে।

‎হাদীস:
ইবনু মুহাইরীয (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

  তিনি বলেন, একদা আমি মাসজিদে প্রবেশ করে আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ)-কে দেখতে পেয়ে তার কাছে গিয়ে বসলাম এবং  আযল  সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। আবু সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) বললেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে বানূ মুসতালিকের যুদ্ধে যোগদান করেছিলাম। এ যূদ্ধে আরবের বহূ বন্দী আমাদের হস্তগত হয়। মহিলাদের প্রতি আমাদের মনে আসক্তি জাগে এবং বিবাহ-শাদী ব্যতীত এবং স্ত্রীহীন অবস্থা আমাদের জন্য কষ্টকর অনুভূত হয়। তাই আমরা  আযল  করা পছন্দ করলাম এবং তা করতে মনস্থ করলাম। তখন আমরা পরস্পর বলাবলি করলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝে আছেন। এ ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞেস না করেই আমরা  আযল  করতে যাচ্ছি। আমরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, এটা না করলে তোমাদের কী ক্ষতি? ক্বিয়ামত পর্যন্ত যতগুলো প্রাণের আগমন ঘটবার আছে, ততগুলোর আগমন ঘটবেই।
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৪১৩৮

মুসলিম সমাজে সন্তান বেশি নেওয়াকে "সওয়াবের কাজ" হিসেবে দেখানো হয়। অনেক আলেম বলেন, "সন্তান বেশি হলে উম্মাহ শক্তিশালী হবে," অথচ বাস্তবে দেখা যায়, অধিকাংশ মুসলিম দেশ চরম দারিদ্র্য ও দুর্দশায় ভুগছে।

রোহিঙ্গা, ফিলিস্তিনি, সিরিয়ান, আফগান, সোমালিয়ান। এসব দেশের দিকে তাকালে দেখা যায়, তাদের বেশিরভাগই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, কিন্তু প্রতিটি পরিবারে ৫-১০ জন সন্তান থাকাটা স্বাভাবিক।

ইউরোপ বা উন্নত বিশ্বে যেখানে পরিবার প্রতি ১-২টি সন্তান স্বাভাবিক, সেখানে মুসলিম পরিবারগুলোতে ৪-৭টি সন্তান দেখা যায়। ফলে ইসলাম দ্রুত বাড়ছে, কিন্তু এটি প্রকৃতপক্ষে ধর্মের সত্যতার কারণে নয়, বরং মুসলিমদের জন্মহার বেশি হওয়ার কারণে।

যদি ইসলাম সত্যিই মহান ধর্ম হতো, তাহলে মুসলিম দেশগুলো আজ উন্নত হতো। কিন্তু দেখা যায়, মুসলিমদের সংখ্যাবৃদ্ধি যত হচ্ছে, দুর্দশাও তত বাড়ছে।

৩. ইসলাম প্রচারে প্রোপাগান্ডার শক্তিশালী ব্যবহার

মুমিনরা শুধুমাত্র জনসংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমেই ইসলাম ছড়িয়ে দিচ্ছে না, বরং তারা মিথ্যা তথ্য ও অতিরঞ্জিত দাবির মাধ্যমে ইসলামের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টা করে।

"কুরআনে বিজ্ঞান"
এটি ইসলামী প্রচারকারীদের সবচেয়ে জনপ্রিয় কৌশল। তারা দাবি করে, কুরআনে নাকি ব্ল্যাক হোল, এমব্রায়োলজি, বিগ ব্যাং, এমনকি কোয়ান্টাম মেকানিক্স সম্পর্কেও তথ্য রয়েছে!

বাস্তবে দেখা যায়, তারা কুরআনের অস্পষ্ট আয়াতগুলোকে বিকৃতভাবে ব্যাখ্যা করে এবং আধুনিক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সঙ্গে জোড়াতালি দিয়ে ইসলামের "অলৌকিকত্ব" প্রমাণ করতে চায়।

ইসলাম প্রচারের জন্য নাস্তিক বিজ্ঞানী, অভিনেতা, খ্রিস্টান পাদ্রী—এমন অনেকের ইসলাম গ্রহণের গুজব ছড়ানো হয়। যেমন:

নীল আর্মস্ট্রং চাঁদে গিয়ে আজান শুনেছেন! (এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা)

বিজ্ঞানী মাইকেল হার্ট বলেছেন, মুহাম্মদ ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী মানুষ! (তিনি আসলে ইতিহাসবিদ, বিজ্ঞানী নন, এবং এটি কেবল তার ব্যক্তিগত মতামত)

ফ্রান্সে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ ইসলাম গ্রহণ করছে! (কিন্তু আসলে কতজন ত্যাগ করছে, তা তারা বলে না)


এই প্রোপাগান্ডার মূল লক্ষ্য হলো মুসলমানদের মনে গর্ব ও আত্মবিশ্বাস তৈরি করা, যেন তারা ভাবতে থাকে ইসলামই শ্রেষ্ঠ ধর্ম।

৪. ইসলাম গ্রহণকারীদের নিয়ে অতিরঞ্জিত প্রচারণা, কিন্তু ত্যাগকারীদের নিয়ে নীরবতা

ইসলাম প্রচারকরা এমনভাবে সংবাদ প্রকাশ করে যেন মনে হয়, পুরো বিশ্ব ধীরে ধীরে মুসলমান হয়ে যাচ্ছে। তারা বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকার কয়েদিদের ইসলাম গ্রহণের ঘটনাগুলো হাইলাইট করে।

যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারগুলোর উদাহরণ এনে বলা হয়, "অনেক কয়েদি ইসলাম গ্রহণ করছে," কিন্তু এই তথ্যের পেছনের সত্য হলো:
কারাগারে ইসলাম গ্রহণের অন্যতম কারণ হলো মুসলিম গ্যাংগুলোর সুরক্ষা। যারা ইসলাম গ্রহণ করে, তারা কারাগারে মুসলিম গোষ্ঠীর সাহায্য পায়, যা তাদের জন্য সুবিধাজনক।

অনেক কয়েদি দুঃসময়ে মানসিক প্রশান্তির জন্য ধর্মের দিকে ঝোঁকে, এবং ইসলাম তার কঠোর নিয়মের কারণে কিছু কয়েদিদের কাছে আকর্ষণীয় মনে হয়।

কিন্তু মুক্তি পাওয়ার পর এদের অনেকেই আবার ধর্ম ছেড়ে দেয়, যা মুসলিম মিডিয়া প্রচার করে না।


বিপরীতে, ইসলামের কঠোরতা ও গোঁড়ামির কারণে যারা এটি ত্যাগ করে, তাদের গল্প কেউ প্রচার করে না।

অনেক সাবেক মুসলিম (Ex-Muslim) নিরাপত্তার কারণে প্রকাশ্যে তাদের অভিজ্ঞতা ভাগ করতে ভয় পায়।

যেসব দেশ বা সমাজে ধর্মত্যাগ শাস্তিযোগ্য অপরাধ, সেখানে কেউ সহজে স্বীকার করতে পারে না যে তারা ইসলাম ছেড়েছে।



উদাহরণ:

ইউরোপ-আমেরিকায় যারা নাস্তিক বা নির্দিষ্ট ধর্মে বিশ্বাসী নয়, তাদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু ইসলামী মিডিয়া একে কখনো হাইলাইট করে না।

মুসলিমদের মধ্যে ধর্মত্যাগের হারও বাড়ছে, কিন্তু ভয়, সামাজিক চাপ এবং নির্যাতনের কারণে বেশিরভাগই তা প্রকাশ করতে পারে না।

৫. ইসলামের প্রসার: আল্লাহর রহমত নাকি মুসলিমদের অন্ধবিশ্বাস?

মুমিনরা দাবি করে, ইসলাম দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে কারণ এটি "সত্য ধর্ম" এবং "আল্লাহর রহমত"। কিন্তু বাস্তবতা হলো:

জনসংখ্যা বৃদ্ধি,

প্রোপাগান্ডা,

রাজনৈতিক ও সামরিক আধিপত্য,

বাধ্যতামূলক ধর্মচর্চা— এসব কারণেই ইসলাম টিকে আছে।



(ক) ইসলামের ইতিহাসে জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ

ইসলামের প্রথম যুগ থেকেই ধর্ম প্রচারের জন্য তলোয়ার ও জিহাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

নবী মুহাম্মদ নিজেই অনেক যুদ্ধ করেছেন এবং বিজিত জাতিদের ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য করেছেন।

খলিফাদের আমলে ইরান, মিশর, ভারত, উত্তর আফ্রিকা—এসব অঞ্চলে ইসলাম বলের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করেছে।

মুসলিম বিজয়কারীরা স্থানীয় জনসংখ্যাকে তিনটি অপশন দিত:

1. ইসলাম গ্রহণ করো,


2. জিজিয়া কর দাও (অমুসলিমদের ট্যাক্স),


3. যুদ্ধ করো এবং মৃত্যুবরণ করো।



ফলে অনেকেই বাধ্য হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছে, যা প্রকৃতপক্ষে তাদের বিশ্বাসের কারণে নয়, বরং নিজেদের নিরাপত্তার জন্য।


(খ) আধুনিক যুগেও মুসলিম দেশগুলোতে ধর্মত্যাগ নিষিদ্ধ কেন?

ইসলামে ধর্মত্যাগ (Apostasy) করলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে, যা আজও অনেক দেশে কার্যকর রয়েছে।

যদি ইসলাম সত্য ধর্ম হতো, তবে কি মানুষকে বলপ্রয়োগ করে মুসলিম রাখতে হতো?

মুসলিম দেশগুলোর আইন দেখলেই বোঝা যায়, তারা ইসলামের প্রসার ধরে রাখতে কতটা কঠোর:

সৌদি আরব, আফগানিস্তান, ইরান, পাকিস্তান— এসব দেশে ধর্মত্যাগ করলে মৃত্যুদণ্ড বা আজীবন কারাদণ্ড হতে পারে।

বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া— এসব দেশে ধর্মত্যাগীরা সামাজিকভাবে হুমকির মুখে পড়ে এবং অনেকে জীবন বাঁচানোর জন্য ধর্মত্যাগের কথা গোপন রাখে।



সত্য ধর্মের কি এইভাবে টিকে থাকার প্রয়োজন হয়?

যদি ইসলাম সত্য হতো, তাহলে কি এটাকে বলপ্রয়োগ, প্রোপাগান্ডা, এবং আইন দিয়ে টিকিয়ে রাখতে হতো?

ইসলামের টিকে থাকার প্রধান কারণ হলো মুসলমানদের অন্ধবিশ্বাস, যা তাদের প্রশ্ন করতে দেয় না।
মূলত আল্লাহ মুমিনদের রক্ষা করে না, বরং মুমিনরা আল্লাহকে রক্ষা করে।

৬. গরিব মুসলিম দেশগুলোর উচ্চ জন্মহার: সংখ্যা বাড়ানোই কি ইসলামের বিস্তারের মূল কৌশল?

ইসলামের দ্রুত বিস্তারের অন্যতম প্রধান কারণ হলো মুসলিমদের অত্যন্ত উচ্চ জন্মহার।

ইসলাম এমন এক ধর্ম, যেখানে জন্মনিয়ন্ত্রণকে নিরুৎসাহিত করা হয় এবং মুসলিম পরিবারগুলোকে বেশি সন্তান নিতে উৎসাহিত করা হয়।


(ক) গরিব মুসলিম দেশগুলোর জন্মহার কেন এত বেশি?

মুসলিম-প্রধান দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্র ও অনুন্নত দেশগুলোতেই জন্মহার সবচেয়ে বেশি। উদাহরণস্বরূপ—

নাইজার: মুসলিম প্রধান এই দেশের গড় জন্মহার ৬.৭ শিশু প্রতি নারী।

সোমালিয়া: ৫.৭ শিশু প্রতি নারী।

আফগানিস্তান: ৪.৬ শিশু প্রতি নারী।

বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিশর, ইন্দোনেশিয়া—এসব দেশেও জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।


অনেক মুসলিম দেশে দারিদ্র্য চরম পর্যায়ে পৌঁছালেও সন্তান সংখ্যা কমানোর বিষয়ে কোনো প্রচেষ্টা নেই।

ইসলাম প্রচার করে যে "সন্তান বেশি নেওয়া সওয়াবের কাজ", যা গরিব মুসলিমদের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


(খ) মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির রাজনৈতিক উদ্দেশ্য

কিছু ইসলামিক চিন্তাবিদ ও নেতা সরাসরি বলেছেন যে, "গরিব মুসলিমরা বেশি সন্তান জন্ম দিয়ে ইসলামের শক্তি বাড়াচ্ছে।"

ইউরোপ ও পশ্চিমা দেশে অভিবাসী মুসলিমরা উচ্চ জন্মহারের কারণে স্থানীয় জনসংখ্যার তুলনায় দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

একাধিক ইসলামপন্থী নেতা বলেছেন—

"আমরা সংখ্যায় বাড়ব, ইউরোপ একদিন আমাদের দখলে আসবে!"

"যুদ্ধের দরকার নেই, শুধু সন্তান জন্ম দাও, ইউরোপ আমাদের হবে!"



(গ) অধিক জনসংখ্যার কারণে মুসলিম দেশগুলোর দুর্দশা

অধিক জন্মহার মানেই অধিক উন্নতি নয়; বরং এটি অনেক মুসলিম দেশের জন্য ভয়াবহ সমস্যা সৃষ্টি করছে—

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী: খাদ্য নেই, নিরাপত্তা নেই, কিন্তু জন্মহার আকাশছোঁয়া।

পাকিস্তান: অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে থেকেও জনসংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।

ফিলিস্তিন: প্রতিটি পরিবারে ৫-৬টি সন্তান থাকা স্বাভাবিক ব্যাপার, যদিও দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে।

বাংলাদেশ: কিছুটা নিয়ন্ত্রণ এলেও এখনো গ্রামাঞ্চলে মুসলিম পরিবারগুলো সন্তান নেওয়ার প্রতিযোগিতায় থাকে।


এই কারণে, ইসলামী সমাজে শিক্ষার হার কম, দারিদ্র্য বেশি, এবং অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা সাধারণ ব্যাপার।


সংখ্যা বাড়ানো কি সত্যিই ইসলামের বিস্তারের প্রমাণ? নাকি এটি মুসলিমদের দুর্দশার অন্যতম কারণ?

৭. ইসলামী প্রোপাগান্ডা: বিজ্ঞান, ইতিহাস ও মিডিয়ায় ইসলামের বিকৃত প্রচার

ইসলামকে টিকিয়ে রাখার অন্যতম প্রধান কৌশল হলো প্রোপাগান্ডা।

মুসলিমরা ইসলামের প্রশংসা করতে গিয়ে বিজ্ঞান, ইতিহাস ও মিডিয়াকে বিকৃত করে নিজেদের ধর্মকে সত্য প্রমাণ করার চেষ্টা করে।


(ক) ইসলামে বিজ্ঞানের বিকৃতি

মুসলমানরা দাবি করে, "কুরআনে আধুনিক বিজ্ঞানের সবকিছু বলা আছে।"

কিন্তু কুরআনে বলা তথাকথিত বৈজ্ঞানিক দাবিগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এগুলোর কোনোটিই সঠিক নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রেই হাস্যকর।


এ ধরনের ভুয়া বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে মুসলমানদের বোকা বানানো হয়, যেন তারা নিজেদের ধর্ম নিয়ে সন্দেহ না করে।


(খ) ইসলামী ইতিহাসের বিকৃতি

মুসলমানদের শেখানো হয় যে, "ইসলাম প্রচারিত হয়েছে শান্তিপূর্ণভাবে", অথচ ইতিহাসে দেখা যায়—

মুহাম্মদ যুদ্ধের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছেন।

মুসলমানরা ভারত, পারস্য, মিশর, স্পেন, আনাতোলিয়া দখল করে ইসলাম চাপিয়ে দিয়েছে।

ইসলামে ধর্মত্যাগের শাস্তি মৃত্যু, যা ইসলামের স্বেচ্ছায় গ্রহণের তত্ত্বকে মিথ্যা প্রমাণ করে।



(গ) ইসলাম গ্রহণ নিয়ে মিডিয়ার পক্ষপাতিত্ব

কোনো অপরাধী ইসলাম গ্রহণ করলে মিডিয়ায় তা ব্যাপক প্রচার করা হয়। যেমন—

যুক্তরাষ্ট্রের কয়েদিরা ইসলাম গ্রহণ করছে, তাই ইসলাম সঠিক!

খারাপ চরিত্রের ব্যক্তি মুসলিম হলে সেটাকে ইসলামের বিজয় হিসেবে দেখানো হয়।


কিন্তু যারা ইসলাম ত্যাগ করে, তাদের কথা মিডিয়ায় প্রকাশিত হয় না বা ইচ্ছাকৃতভাবে চেপে রাখা হয়।


ইসলামের এই প্রোপাগান্ডা কি সত্যিই ধর্মের শক্তি? নাকি এটি মুসলমানদের অন্ধবিশ্বাসের ফল?


৮. ইসলাম গ্রহণের প্রচার, কিন্তু ত্যাগের প্রচার নেই: দ্বীনের সত্যতার প্রকাশ কি শুধুই নির্বাচিত?

ইসলাম গ্রহণের ঘটনা মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়, কিন্তু ইসলাম ত্যাগের ঘটনা গোপন রাখা হয়।


(ক) ইসলাম গ্রহণের প্রচার

ইসলাম গ্রহণের ঘটনাগুলো নানা মাধ্যমে প্রচার করা হয়, বিশেষ করে যখন কোনো বড় নামী ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করে।

মিশেল জয়, ক্যাটি পেরি, মোহাম্মদ আলী—এদের ইসলাম গ্রহণের খবর আলোচিত হয়, যেন এটি ইসলামকে বিশ্বব্যাপী এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে।

সেই সব ঘটনাগুলোকে এমনভাবে প্রচার করা হয়, যেন ইসলাম সত্য প্রমাণিত হচ্ছে এবং এর বিশ্বজনীনতা নিশ্চিত হচ্ছে।

প্রচার করা হয়, "দেখো, ইসলামের প্রতি সম্মান ও আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে" এবং একে একটি আধুনিক, যুক্তিসম্মত ধর্ম হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।

মুসলিমরা এটিকে "আল্লাহর রহমত" হিসেবে দেখেন, তবে এটা শুধু একপেশে প্রচার করা হয়।



(খ) ইসলাম ত্যাগকারীদের নিষ্ক্রিয় প্রচার

কিন্তু ইসলাম ত্যাগের ঘটনাগুলো মিডিয়ায় কখনো হাইলাইট করা হয় না।

একাধিক ধর্মীয় সমালোচক, এমনকি মুসলিম দেশ থেকে পালিয়ে আসা অনেকে এই ধর্ম ত্যাগ করেছেন, তবে তাদের খবর সাধারণত প্রচারিত হয় না।

"ইসলাম ত্যাগী ব্যক্তিরা কি কম মুমিন হয়ে যাচ্ছেন?" এমন প্রশ্ন কখনো কোনো সাংবাদিক তুলে ধরেন না।

পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা যতটুকু প্রচারিত হয়, সেটি থাকে "সাংবাদিকতা বা রাজনৈতিক কারণে"।

ত্যাগকারীকে কখনোই "বিশ্বস্ত তথ্য" হিসেবে দেখা হয় না, বরং তারা শুধু "অজ্ঞ" বা "অন্যায়কারি" হিসেবে চিহ্নিত হন।



(গ) মুসলিমদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমাজের চাপ

ইসলামের মধ্যে ধর্মত্যাগী হওয়া মেনে নেওয়া হয় না এবং তা সমাজের জন্য অত্যন্ত অপমানজনক মনে করা হয়।

ইসলামের বিরোধিতা করার মতো সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে যারা চলে যান, তাদের প্রতি মুসলিমদের মনোভাব বেশ কঠোর থাকে।

এই ধরনের মুসলিমদের "বিশ্বাসঘাতক" বা "অপবিত্র" হিসেবে দেখা হয়।


সমাজের চাপ এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে অনেকেই ইসলাম ত্যাগ করে চুপচাপ থাকেন, কারণ তাদের উপর সামাজিক নিষিদ্ধতা চাপিয়ে দেওয়া হয়।


তাহলে কেন মুসলিম সমাজ ও মিডিয়া ইসলাম ত্যাগকারীদের ভুল ধারণা বা অবিশ্বাস্য পন্থা হিসেবে উপস্থাপন করে না?

৯. ইসলাম এবং শিশুদের জন্মহার: গণতান্ত্রিক চেতনাকে গ্রাস করছে ধর্মীয় প্রসারণ।

(ক) মুসলিম দেশগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি: কেন?

মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে গরীব এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোতে জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যেখানে পরিবারগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়।

যেমন রোহিঙ্গা, ফিলিস্তিনি, সিরিয়ান, আফগান—এদের মধ্যে অনেকেই যেখানে ভালোভাবে খেতে পান না, তবুও তাদের পরিবারে অনেক সন্তান থাকে।

কী কারণে?

ধর্মীয় শিক্ষা: ইসলামিক সমাজে সন্তান লালন-পালনকে আল্লাহর উপহার এবং দায়িত্ব হিসেবে দেখা হয়।

অর্থনৈতিক অসুবিধা: গরীব দেশের পরিবারের জন্য সন্তানদের বড় করা সামাজিক নিরাপত্তা হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ তাদের বৃদ্ধ বয়সে তাদের জন্য এগুলোই সাহায্য করবে।

ধর্মীয় চাপ: ইসলামিক শিক্ষায় একটি পরিবারকে বেশ বড় হিসেবে দেখা যায়, এবং এটি একটি ধর্মীয় আদর্শ হিসেবে তুলে ধরা হয়, যেন তারা ইসলামের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারে।



(খ) বাচ্চা জন্মানোর ফলে কী ঘটে?

এই দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি আসলে এগিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে পিছিয়ে দেয়।

গরীব মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে শিশুর জন্মহার বেশি, কিন্তু তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শিক্ষা ক্ষেত্র অনেকটা পিছিয়ে থাকে।

রোহিঙ্গারা তাদের জন্মহার বাড়ানোর চেষ্টায় ব্যস্ত, অথচ তাদের মৌলিক চাহিদাগুলি যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, খাওয়ার জন্য খাবার, সুস্থ পরিবেশ সঠিকভাবে পূর্ণ হয় না।

এটি সামাজিকভাবে সমস্যা সৃষ্টি করে, যেখানে তাদের সামনে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, শিক্ষা এবং শৃঙ্খলা সম্পর্কিত প্রকৃত চ্যালেঞ্জ থাকে।

তারা শিশুদের জন্ম দেয়, কিন্তু তারপর তাদের ভালোভাবে লালন-পালন করতে পারে না।



(গ) শিশুর জন্মের সাথে প্রোপাগান্ডার সম্পর্ক

যখন এসব দেশের মানুষ সন্তান জন্ম দেয়, তখন এটিকে ধর্মীয় সাফল্য হিসেবে দেখা হয়।

এই সমাজে ধর্মীয় নেতাদের তৎপরতা বেশ লক্ষ্যণীয়, যারা শিশুদের জন্মকে ধর্মীয় কর্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করে।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এটি ইসলামের প্রচারের একটি অংশ হিসেবে নেয়া হয়।

অনেক মুসলিম সমাজে, "এটা আল্লাহর অভিসম্পাত" এমনভাবে প্রচার করা হয়, যেন মুসলমানদের দৃষ্টিতে এটি বিশ্বব্যাপী ইসলামী শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে।



(ঘ) কিছু বাস্তবিক চ্যালেঞ্জ

এসব দেশগুলোর শিশুর জন্মহার বেশি হওয়ায় অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং জীবনের মানের অবনতি ঘটে।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য—এই সমস্ত মৌলিক বিষয়গুলো অনেক সময় পেছনে পড়ে যায়।

রোহিঙ্গা শিশুদের প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার রিপোর্ট বলছে, তাদের জন্য উপযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং খাদ্য সুরক্ষা নেই, অথচ তাদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে।

তাহলে ইসলামিক সমাজে বাড়তি জন্মহার কি সত্যিই সমাজকে উন্নত করে, নাকি এটি আরো পিছিয়ে নিয়ে যায়?


১০. প্রোপাগান্ডা: কুরআন ও হাদীসে বিজ্ঞানবিরোধী বক্তব্য এবং মিথ্যার প্রচার

(ক) প্রোপাগান্ডার শক্তি: মুসলিমদের মধ্যে বিজ্ঞানের নামে ধর্মীয় মতাদর্শ প্রচার

ইসলামের প্রচার অনেক সময় বিজ্ঞানের নামে করা হয়, যেখানে কুরআন ও হাদীসের কিছু ভুল তথ্যকে “বৈজ্ঞানিক প্রমাণ” হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।

মুসলিমরা বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করতে চায়, এবং নিজেদের ধার্মিক অবস্থানকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি দেওয়ার চেষ্টা করে।

এর মধ্যে বিশ্বের সৃষ্টি, মানুষের উদ্ভব, এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঘটনা সম্পর্কে যে সব তত্ত্ব কুরআন ও হাদীসে দেওয়া হয়েছে, সেগুলোকে ভুলভাবে বিজ্ঞানের সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করা হয়।

উদাহরণস্বরূপ, কুরআনের কিছু আয়াতে আত্মার সৃষ্টির ধারণা, বৈশ্বিক বন্যা, বা মহাকাশের সৃষ্টির সূত্র নিয়ে কথা বলা হয়, যা আধুনিক বিজ্ঞানের সঙ্গে মেলে না।

ইসলামিক প্রচারকারীরা এসব ভুল ধারণাকে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করে, যাতে ধর্মীয় বিশ্বাসের গ্রহণযোগ্যতা আরও বেড়ে যায়।



(খ) কুরআনে থাকা বৈজ্ঞানিক ভুল

কুরআন ও হাদীসে যে সব বৈজ্ঞানিক ভুল আছে, সেগুলো স্বীকার না করে ইসলামিক প্রোপাগান্ডা এগুলোকে পুনঃব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে।

বৈশ্বিক বন্যা: কুরআনে বর্ণিত নুহ (আ.) এর সময়ের বন্যা ও পৃথিবী ধ্বংসের ঘটনা এখন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়।

মহাকাশের সৃষ্টির ধরণ: কুরআনে মহাকাশের সৃষ্টির যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তা আধুনিক বিজ্ঞান থেকে খুব আলাদা।

আব্রাহামিক ধর্মের পাখি: কুরআনে পাখির কথা বলা হয়েছে যে, তা আল্লাহর আদেশে উড়ে যায়। বিজ্ঞানের মতে, পাখির উড়ন্ত গতি বা অভ্যন্তরীণ শক্তি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের গঠন ও শারীরিক বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে।

আদমের সৃষ্টি: আদম এর সৃষ্টি সম্পর্কে কুরআনের ব্যাখ্যা বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত হয় না, কারণ আধুনিক বিজ্ঞান বিবর্তন তত্ত্বকে সমর্থন করে, যা কুরআনের সঙ্গে মেলে না।



(গ) বিজ্ঞান ও ধর্মের সংঘাত

অনেক মুসলিম প্রোপাগান্ডা প্রচার করে যে, ধর্ম ও বিজ্ঞান কখনো একে অপরের বিপক্ষে যায় না, কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানকে যখন কুরআনের সাথে মেলানো হয়, তখন সেখানে গুরুতর ভুল প্রকাশ পায়।

ধর্মীয় মতাদর্শে বিজ্ঞানকে ঢোকানো প্রকৃতপক্ষে কোনো গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি নয়, বরং এটি একটি বৈজ্ঞানিক মিথ গড়ে তোলে, যা মানুষকে একটি অবাস্তব ধারণার দিকে ঠেলে দেয়।

এর মাধ্যমে তারা দর্শন ও বিজ্ঞানের প্রগতিশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করে এবং ধর্মীয় নিয়ম-নীতি যথাযথভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

এটাই ইসলামী প্রোপাগান্ডার একটি বড় দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে বিজ্ঞান ও ধর্মকে একে অপরের সঙ্গে মেলানো হয়।



(ঘ) সঠিক বৈজ্ঞানিক শিক্ষার অভাব

মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে অনেক জায়গায় বৈজ্ঞানিক শিক্ষা কিংবা গবেষণার চর্চা নেই, বরং ধর্মীয় পাঠ্যক্রম শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।

বিজ্ঞান সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় বহু মুসলিম বৈজ্ঞানিক মৌলিক তথ্য ভুলভাবে গ্রহণ করে, এবং ধর্মীয় বিশ্বাসকে বেঁধে ফেলে।

এতে শিক্ষার্থীদের বৈজ্ঞানিক চিন্তা বিকশিত না হয়ে, তাদের মধ্যে ধর্মীয় ভাবাবেগ গড়ে ওঠে, যা তাদের চিন্তার বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে।



(ঙ) ইসলামিক প্রচারকদের দৃষ্টিকোণ

অনেক ইসলামিক প্রচারক আছেন যারা বিজ্ঞান ও ধর্মের মিল প্রতিষ্ঠা করার জন্য এমন সমস্ত পন্থা গ্রহণ করেন, যা অবৈজ্ঞানিক এবং মিথ্যা তথ্য দ্বারা ভরা।

তারা শুধু ধর্মীয় কাহিনী উপস্থাপন করে বিজ্ঞানকে তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই মেনে নিতে বলেন, যাতে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে কোনো প্রশ্ন না আসে।

এমন প্রচারণা করে তারা বিজ্ঞানের অগ্রগতি এবং মানবতার উন্নয়ন স্তব্ধ করে রাখতে চায়।


১১. ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে সমাজে পরিবর্তন: মিথ্যাচার ও বাস্তবতা

(ক) ইসলাম গ্রহণের পর পরিবর্তন: প্রশ্নবিদ্ধ সত্য

অনেক সময় প্রচার করা হয় যে, ইসলাম গ্রহণ করলে ব্যক্তি বা সমাজের জীবন সুসংগত ও ভালো হয়ে ওঠে। ইসলাম ধর্মকে গ্রহণকারী অপরাধী, খারাপ মানুষ বা কয়েদি অনেক সময় সমাজে ফিরে গিয়ে নিজের জীবনকে সংশোধন করে, এই ধরনের খবর অনেক প্রচার করা হয়।

কিন্তু বাস্তবতা হলো, ইসলাম গ্রহণের পর যদি কোনো মানুষ পরিবর্তন হয়ে যায়, তবে তা একান্তই তার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার কারণে। ধর্মবিশ্বাসের বদলানোর কারণে সে সত্যিকার অর্থে যদি বিকাশ লাভ করে, তাহলে সেটি ব্যক্তির নিজের অভ্যন্তরীণ চেষ্টার ফল

সমাজে ইসলামের প্রভাবের কারণে ব্যক্তি নতুন জীবন পেলে সেটি সঠিক সমাজব্যবস্থার জন্য নয়, বরং তার নিজস্ব পছন্দ ও প্রচেষ্টার উপর নির্ভর করে।

ইসলাম গ্রহণ করলে অনেক সময় সামাজিক পরিবর্তন ঘটতে পারে, তবে তা একমাত্র মৌলিক মূল্যবোধ ও আচার-ধর্মের পরিবর্তন থেকে নয়, বরং পূর্ববর্তী বিশ্বাস ও সংস্কৃতির অবলম্বনে ঘটে।

(খ) মিথ্যাচার ও প্রচার: খারাপ লোকদের মধ্যে ইসলামের গ্রহণ

মুমিনরা ইসলাম গ্রহণের খবর প্রচারের সময় জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের কয়েদি বা গরীব জনগণের মধ্যে অনেকেই ইসলামে প্রবেশ করছেন, এর মাধ্যমে তারা বোঝাতে চান যে ইসলাম একটি উন্নত ধর্ম

কিন্তু এটা ঠিক যে অনেক খারাপ মানুষ, অপরাধী বা সঙ্কটগ্রস্ত ব্যক্তি যখন ইসলাম গ্রহণ করেন, তখন এটি কেবল ধর্মের প্রতি ব্রেইনওয়াশিং না, বরং সামাজিক বা পারিবারিক দিক থেকে জীবন যুদ্ধে হারানো লোকেরা একটি আস্থার জায়গা খুঁজে পাচ্ছে।

ইসলামে প্রবেশ করার সাথে সাথে তাদের জীবন একমাত্র ধর্মীয় বিধি-নিষেধের দিকে চলে আসে; যেখানে তারা নিজেদের অপরাধী মনোভাব এবং বিগত জীবন থেকে পালিয়ে একটি শান্তির খোঁজে আসে।

অন্যদিকে, ভালোমানুষরা যখন ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়, তখন তাদের ব্যাপারে কোনো আলোচনা শোনা যায় না। এটা বোঝায় যে ইসলাম একমাত্র ভালো মানুষের কাছে উপযোগী নয়, বরং এটি দুঃখী ও দুর্বল ব্যক্তিদের জন্য একটি আশ্রয়

(গ) জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও গরীব দেশগুলোর মুসলিম সমাজ

গরীব মুসলিম দেশগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি একটি বড় সমস্যা। দেশে অর্থনৈতিক সংকট থাকার পরও জনসংখ্যা বৃদ্ধি অত্যন্ত উচ্চ। এর মধ্যে রোহিঙ্গা, ফিলিস্তিনি, সিরিয়ান এবং আফগান মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এই দেশগুলোর অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করলেও, তাদের পেটে ভাতের অভাব থাকলেও, নতুন সন্তানের অভাব থাকে না। এটা অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি

এসব মুসলিম পরিবার সাধারণত সন্তানের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় ধর্মীয় নিয়ম-কানুনের কারণে, যেখানে সঠিক পরিকল্পনা, স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কোনো সঠিক শিক্ষা নেই।

এর ফলে এই গরীব মুসলিম সমাজের জীবন অভাব ও সংকটের মধ্যে চলে যায়, যেখানে অন্তঃসন্তান জনসংখ্যার উপর তীব্র চাপ সৃষ্টি হয়।

আরব দেশগুলো এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত মুসলিম দেশগুলোর মধ্যেও একই সমস্যা দেখা যাচ্ছে, যেখানে জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নতি ও সচেতনতা কম

(ঘ) প্রোপাগান্ডা: ইসলামকে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন

ইসলামের প্রচারের সময় বলা হয় যে, বিজ্ঞান এবং ধর্মের মেলবন্ধন ঘটে, এবং ইসলাম সব ক্ষেত্রে সঠিক।

প্রোপাগান্ডা এমনভাবে তৈরি করা হয় যেন সারা পৃথিবী বিশ্বাস করে, ইসলামেই একমাত্র বৈজ্ঞানিক যুক্তি রয়েছে, যা বিশ্বের সমস্ত সমস্যা সমাধান করবে।

তবে বাস্তবে, ইসলামিক কুরআন বা হাদীসের মধ্যে অবৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো পূর্ণ রয়েছে, যেগুলো আধুনিক বিজ্ঞানের প্রতি কটু ও অবাস্তব।

উদাহরণস্বরূপ, বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব যেমন ভূপৃষ্ঠের গঠন, জৈবিক বিবর্তন অথবা বিশ্বের সৃষ্টি নিয়ে কুরআন যেসব বক্তব্য দেয় তা সমকালীন বিজ্ঞানের সাথে পুরোপুরি মেলে না।

তারপরও এই মতবাদ প্রচার করা হয় যে বিজ্ঞানইসলামের মিল খুবই নির্ভুল, যা আসলে একটি মিথ্যাচারের অংশ।


১২. ইসলাম এবং প্রাচীন সভ্যতাগুলোর মধ্যে তুলনা: সভ্যতার উন্নতি না অবনতি?


(ক) ইসলাম এবং প্রাচীন সভ্যতার মধ্যে প্রভাব: এক ইতিহাসের ছায়া


ইসলামের আগমন এবং তার প্রচারের সময় পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতা ছিল যেমন, মিসরীয় সভ্যতা, গ্রিক সভ্যতা, এবং রোমান সভ্যতা। এগুলো ছিল উচ্চতর বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও প্রযুক্তিতে অগ্রসর সভ্যতা।


ইসলামের আবির্ভাবের পর একদিকে ইসলামিক স্বর্ণযুগের প্রসঙ্গ আসে, যেখানে মুসলিম সভ্যতা বৈজ্ঞানিক গবেষণার পাশাপাশি শিল্প, সাহিত্য, গণিত, চিকিৎসা, স্থাপত্য ইত্যাদির উন্নতি ঘটায়। তবে ইতিহাসের এই অংশে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, প্রাচীন সভ্যতাগুলোর বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি ইসলামের আগমনের পর কোথায় হারিয়ে গিয়েছিল?


প্রাচীন সভ্যতাগুলোর যা অগ্রগতি ছিল, ইসলামের প্রচারের সময় তার অপরিহার্য অগ্রগতি থেমে যায়। ইসলামের শাসন প্রতিষ্ঠার পর, আধুনিক চিন্তার প্রবণতা অনেকটাই নিরুদ্ধ হয়ে যায়, যা পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের জন্য একটি স্থবিরতার সৃষ্টি করে।




(খ) মুসলিম বিশ্বের স্বর্ণযুগের বাস্তবতা


ইসলামিক স্বর্ণযুগে মুসলিম সভ্যতা যেসব বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, গণিতবিদ, দার্শনিক এবং শিল্পী তৈরি করেছে, তারা তাদের বিজ্ঞান ও বিশ্বভাবনা অন্যান্য জাতির কাছে শিখতে না গিয়ে নিজেদের সীমাবদ্ধতা ও ইসলামিক ধারণার মধ্যে আটকে পড়ে।


তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল, তবে, এগুলোর অনেকাংশেই ছিল মৌলিক বৈজ্ঞানিক চিন্তা ও পরিকল্পনার অভাব। এই কারণে তাদের অগ্রগতি ছিল সীমাবদ্ধ এবং দীর্ঘ সময় ধরে কোনো নতুন প্রযুক্তির সৃজন বা গঠন হয়নি।


একদিকে, যদি ইসলামিক স্বর্ণযুগের বৈজ্ঞানিক কর্মসমূহ তুলনা করা হয় প্রাচীন সভ্যতার সাথে, তবে দেখা যায় যে তারা পরবর্তী যুগে চলে যাওয়ার জন্য নতুন পথে চিন্তা শুরু করতে সক্ষম হয়নি।




(গ) ইসলামের মধ্যস্থতায় সামাজিক পরিবর্তন: উন্নতি নাকি অবনতি?


ইসলামের স্বাভাবিক কাঠামো এবং আইন ও বিধান ব্যবস্থার ফলে সমাজের মধ্যে কিছুটা স্থিতিশীলতা এবং ধর্মীয় শৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল।


তবে এটি যে সামাজিক বা সাংস্কৃতিক উন্নতি ঘটিয়েছে তা বলা কঠিন। প্রকৃতপক্ষে, ইসলামের আইনের আওতায় অনেক ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন, শিক্ষার ক্ষেত্রে অন্ধবিশ্বাস এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ ছিল।


মুসলিম সভ্যতার প্রেক্ষাপটে মুসলিম সমাজের ভেতরেও নারীদের প্রতি বৈষম্য, অন্য ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের প্রতি নিষ্ঠুরতা এবং জাতি-ধর্মের মধ্যে বিভাজন ঘটেছে।




(ঘ) ধর্মীয় শাসন এবং সামাজিক অগ্রগতি: একটি সীমাবদ্ধ চক্র


ধর্মীয় শাসন এবং ধর্মের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক সামাজিক অগ্রগতি ব্যাহত করেছে।


ইসলামি রাজত্বের সময়ে প্রাথমিক যুগে যখন মুসলিম শাসকরা ধর্মীয় আইনে সমাজ পরিচালনা করেছিল, তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা বিজ্ঞান, দর্শন বা স্বাধীন চিন্তা থেকে বিরত ছিল।



ধর্মীয় শাসন যখন একটি দেশে মৌলিক বিধান এবং আইনের ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়, তখন এর প্রভাব হয় সীমিত এবং অনেক ক্ষেত্রেই অগ্রগতি স্তব্ধ হয়ে যায়।



(ঙ) সভ্যতার সমালোচনা: ইসলামের প্রভাব পৃথিবীতে কি সত্যিই অবদান রেখেছে?


ইতিহাসে যখন ইসলামের শক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়, তার প্রভাব কি পৃথিবীর উন্নতির জন্য উপকারী ছিল?


ইসলামের প্রভাব অনেক দেশে ধর্মীয় সংস্কৃতির দোহাই দিয়ে সামাজিক অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করেছে।


শিক্ষার ক্ষেত্রেও, সৃজনশীল চিন্তাভাবনা এবং স্বাধীনতা অনেক সময় ধর্মীয় বিধির কারণে কণ্ঠরোধ হয়েছে।


মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অবিশ্বাসী চিন্তা কে গর্হিত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল।



১৩. ইসলামি বিশ্বে নারীর অবস্থান: অধিকার না নির্যাতন?


(ক) ইসলামের দৃষ্টিতে নারী: সামাজিক ভূমিকা ও প্রতিক্রিয়া


ইসলাম নারীর জন্য বিভিন্ন ধরণের অধিকার ও নিরাপত্তার কথা বললেও, ইতিহাসে দেখা গেছে যে মুসলিম সমাজে নারীদের ওপর অত্যাচার ও শোষণের অনেক ঘটনা ঘটেছে।


মুসলিম সমাজে নারীদের অধিকারের ব্যাপারে ইসলামিক আইন কী বলে, তা নিয়ে নানা মতামত রয়েছে, কিন্তু বাস্তবে নারীদের অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বাধীনতা, শিক্ষা ও সামাজিক অংশগ্রহণের অধিকার প্রায়ই সীমিত ছিল।



ইসলামি আইন অনুযায়ী, নারীদের জন্য বিশেষ কিছু অধিকার রয়েছে, যেমন: বৈবাহিক অধিকার, উত্তরণ অধিকার, এবং অর্থনৈতিক অধিকার, তবে সেগুলি প্রায়ই সমাজের ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে।


বেশিরভাগ মুসলিম দেশে নারী শিক্ষা ও কর্মজীবনে অংশগ্রহণ সীমাবদ্ধ ছিল। নারীদের অনেক ক্ষেত্রেই সামাজিক ও ধর্মীয় গোঁড়ামির শিকার হতে হয়েছে, যেখানে তারা নিজের ইচ্ছা বা স্বাধীনতার বাইরে কাজ করতে পারতেন না।




(খ) নারীকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বানানো: ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও সংস্কৃতির প্রভাব


ইসলাম ও মুসলিম সমাজের প্রভাবের কারণে, অনেক ক্ষেত্রে নারীদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।


ইসলামিক রাষ্ট্রে নারীদের ভূমিকা ছিল গৃহকর্মী, স্ত্রীর মধ্যে সীমাবদ্ধ, এবং তাদেরকে রাজনৈতিক বা ধর্মীয় দিক থেকে অধিকতর সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার দেওয়া হয়নি।


প্রাচীন ইসলামী সমাজে নারীদের রক্ষিতা বা যথাযথ কর্তৃত্ব হিসাবে দেখা হয়েছে, কিন্তু তারা সামাজিক জীবনে নিজেদের অবস্থান প্রতিষ্ঠা করতে পারত না।



নারীদের ওপর ধর্মীয় শাসন এবং তথ্য গোপন করার মাধ্যমে তাদের স্বাধীনতা কে সংকুচিত করা হয়। বহু মুসলিম দেশে নারীদের স্বাধীন চিন্তা এবং কর্মজীবনে অংশগ্রহণের অধিকার ছিল ক্ষুন্ন।



(গ) ইসলামের বিবাহ ব্যবস্থা: নারীর অধিকার বা শোষণ?


ইসলামে বিবাহের জন্য নারী ও পুরুষের মাঝে একপ্রকার চুক্তির ধারা রয়েছে, যেখানে নারীর সম্মতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে বাস্তবে দেখা গেছে, বেশ কিছু সমাজে নারীদের পুরুষের অধিকার হিসেবে দেখা হয়েছে এবং তাদের বিবাহের অধিকার ও স্বাধীনতা স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুন্ন ছিল।


পুরুষের একাধিক বিবাহ এবং তিন তালাক নিয়ম নারীদের জীবনে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।


একাধিক বিবাহে নারীকে শুধু একজন মালিকের উপপাদ্য হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল।


ইসলামী বিবাহ ব্যবস্থার ফলে নারীদের অধিকার এবং স্বাধীনতা প্রায়ই অস্পষ্ট এবং বিভাজনমূলক হয়ে গেছে, যেখানে নারীকে বিনামূল্যে শোষণের যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।




(ঘ) শিক্ষা ও নারী: ইসলামী সমাজে নারীর শিক্ষার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি


ইসলামে নারী শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে মুসলিম সমাজে নারীদের শিক্ষা অত্যন্ত সীমিত ছিল এবং তাদের ওপর নানা বিধিনিষেধ ছিল।


অনেক মুসলিম দেশে নারীদের স্কুলে যাওয়ার এবং শিক্ষার অধিকার ছিল সীমিত, যা ইসলামিক সমাজের শাসন এবং সামাজিক কাঠামোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।



নারীদের শিক্ষার প্রতি ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা এত বেশি ছিল যে তাদের সামাজিক ও আত্মবিশ্বাসী উন্নতি অনেক সময় সম্ভব হয়নি।


নারীদের শিক্ষার প্রতি সমাজের অবহেলা অনেক সময় তাদের ভবিষ্যৎ এবং স্বাধীন চিন্তা কে রুদ্ধ করে দিয়েছে।




(ঙ) ইসলামী সমাজের নারীরা কেন নির্যাতনের শিকার?


মুসলিম দেশগুলোতে নারীদের নির্যাতন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন মহামারি আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে।


অনেক মুসলিম দেশে নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণ এসবকে আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকে খুব কম গুরুত্ব দেওয়া হয়, যেখানে নারীকে অধিকার বঞ্চিত করা হয়।


ধর্মীয় আইন ও সংস্কৃতির মধ্যে সঙ্গতি না থাকার কারণে, নারীদের অনেক ক্ষেত্রে শরীরী এবং মানসিক শোষণ করা হয়।


তাদের আত্মবিশ্বাস, শিক্ষা এবং কর্মজীবন প্রায়ই সমাজের গোঁড়া মানসিকতার কাছে হেরে যায়।




(চ) নারীর ধর্মীয় স্বাধীনতা: ইসলামি সমাজে নারীর সামাজিক অবস্থা


ইসলামী সমাজে নারীর ধর্মীয় স্বাধীনতা সীমিত, কারণ ইসলাম নারীদের যে ধর্মীয় শাসন দেয়, তা সামাজিক জীবনে তাদের ভিন্ন রকম বাধাগ্রস্ত করে।


মুসলিম সমাজে নারীদের ধর্মীয় শৃঙ্খলার কারণে স্বাধীন চিন্তা এবং জীবনযাপনের ক্ষেত্র ক্ষীণ হয়ে যায়, যেখান থেকে তারা নিজেদের সঠিক অবস্থান তৈরি করতে পারে না।


ইসলামী বিধি-নিষেধে নারীদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা কে চ্যালেঞ্জ করা হয়, যা তাদের জীবনে নানা ধরণের মানসিক চাপ এবং অবহেলা সৃষ্টি করে।



১৪. ইসলামিক ইতিহাসের অন্ধকার অধ্যায়: যুদ্ধ, গণহত্যা এবং বর্বরতা


(ক) ইসলামের প্রতিষ্ঠার সময়কার যুদ্ধ: শান্তির ধর্ম নাকি যুদ্ধের ধর্ম?


ইসলামের প্রতিষ্ঠা পরবর্তী সময়ে, প্রাথমিক ইসলামী ইতিহাসে যুদ্ধ ও সহিংসতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যদিও ইসলাম শান্তির ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ইতিহাসে ইসলামের বিস্তার একটি রক্তক্ষয়ী পথ ছিল।


বদর যুদ্ধ, উহুদ যুদ্ধ, এবং খন্দক যুদ্ধ সহ অন্যান্য যুদ্ধগুলোতে অজস্র মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল, এবং এসব যুদ্ধের পেছনে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল।


ইসলামের প্রতিষ্ঠার সময়ের মুহাম্মদের নেতৃত্বে বিভিন্ন কুরআন ও হাদিসের মাধ্যমে যুদ্ধের প্রতি আহ্বান করা হয়েছিল, যার ফলে একাধিক যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল। ইসলামের বিস্তারের জন্য শক্তি প্রয়োগ এবং যুদ্ধ অনেক সময় আবশ্যক ছিল।




(খ) গণহত্যা: ইসলামী সাম্রাজ্যবাদের অন্ধকার দিক


ইসলামী সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার, বিশেষ করে উমাইয়া, আব্বাসি এবং মোগল সাম্রাজ্য সময়, কিছু বিতর্কিত এবং অমানবিক কার্যক্রম সংগঠিত হয়েছিল।


ইসলামী সাম্রাজ্যবাদের সম্প্রসারণের জন্য জনসংখ্যার উপর অত্যাচার, গণহত্যা, এবং ধর্মীয় নিপীড়ন চালানো হয়েছিল। যেমন, ইবনে আবি শিহাব এবং হজ্বাজ ইবনে ইউসুফ এর সময়কার গণহত্যা।


আলহা (স্পেন) এবং বালকান অঞ্চলে মুসলিম সেনারা শোষণ এবং হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, যা ইতিহাসের একটি অন্ধকার অধ্যায় হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।




(গ) নারীদের বিরুদ্ধে বর্বরতা: ইসলামের প্রাথমিক সময়ের নির্যাতন


ইসলামের প্রাথমিক যুগে, নারীদের প্রতি সহিংসতা এবং নির্যাতন বিশেষভাবে খারাপ ছিল। ইসলামী সমাজের প্রথম প্রজন্মের মধ্যে নারীদের বিরুদ্ধে এমন বর্বরতা ঘটেছিল যা নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য ছিল।


ইসলামী দৃষ্টিকোণে নারীদের স্বাধীনতা বা মানবাধিকার প্রায়শই ব্যর্থ হয়েছিল, বিশেষত তারা সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন না।


প্রথম খিলাফতের যুগ থেকে, নারীদের লাঠি, শ্বাসরোধ এবং নির্যাতন করা হয়েছিল, এবং তাদের অধিকার প্রায়ই অস্বীকার করা হয়েছিল।




(ঘ) হত্যাযজ্ঞ: মুসলিম শাসকদের অমানবিকতা


মুসলিম শাসকরা, বিশেষত প্রাথমিক ইসলামি যুগের খলিফারা, নিজেদের শক্তি ও আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতন চালিয়েছিলেন।


ইবনে আবি লাহাব এবং হজ্বাজ ইবনে ইউসুফ এর শাসনামলে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও বিশ্বাসী মুসলিমদের নির্যাতন ও হত্যা করা হয়েছিল।


ইবনে তায়মিয়া তার কাজের জন্য পরিচিত ছিলেন, কিন্তু তার নেতৃত্বে অনেক হত্যাযজ্ঞ এবং সমাজের অগ্রহণযোগ্য কার্যক্রম ঘটেছিল।




(ঙ) ইসলামি সাম্রাজ্যবাদ ও ধর্মীয় নিপীড়ন


ইসলামী সাম্রাজ্য যখন একটি বিশাল সাম্রাজ্য হয়ে ওঠে, তখন তা অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন চালিয়ে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ করতে থাকে।


মাজহাবিক দ্বন্দ্ব, শিয়া-সুন্নী সংঘাত, এবং যুদ্ধের মাঝে অন্য ধর্মের অনুসারীদের অত্যাচার ছিল।


মুসলিম সাম্রাজ্যের মধ্যে অনেক সময় ধর্মীয় গোঁড়া ভাবনা এবং সামাজিক চাপে অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়কে ধর্মান্তরিত করা বা নিপীড়ন করা হত।




(চ) ইসলামি যুদ্ধে বিজয়ের পরের তাণ্ডব


ইসলামি শাসকরা যখন কোনো অঞ্চলে বিজয়ী হতেন, তখন সেই অঞ্চলের সাধারণ জনগণের ওপর ধর্মীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তারা সহিংসতা ও নির্যাতন চালাতেন।


বাগদাদ, ফিলিস্তিন, স্পেন ইত্যাদি অঞ্চলে ধর্মীয় যুদ্ধের পরে মানুষকে ইসলামে প্রবেশ করানোর জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে, আর যারা এতে সাড়া দিতেন না তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হত।


ধর্মান্তরিত না হলে হত্যাযজ্ঞ চালানো হত, এবং মুসলিম শাসকদের তাণ্ডব জাতির ইতিহাসে অন্ধকার দিক হিসেবে চিহ্নিত হয়।




(ছ) ইসলামি সমাজে সহিংসতা: আজও চলমান প্রভাব


-আজও মুসলিম দেশের অনেক অঞ্চলে, পুরনো ইসলামী সহিংসতার প্রচলন দেখতে পাওয়া যায়।


*সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং মধ্যযুগীয় যুদ্ধের প্রভাব আজও মুসলিম বিশ্বে একাধিক সংকট সৃষ্টি করছে, যেখানে নারীরা, শিশু এবং সাধারণ জনগণ আক্রান্ত হচ্ছেন।


*মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া, আফ্রিকা সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় যুদ্ধ এবং নির্যাতন আজও চলছে, যা ইসলামের প্রাথমিক ইতিহাসের অন্ধকার অধ্যায়ের ধারাবাহিকতা হতে পারে।



১৫. ইসলামী রাষ্ট্রের অশান্তি: সামাজিক অব্যবস্থা ও সংকট


(ক) ইসলামী শাসনব্যবস্থার বাস্তবতা: রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সন্ত্রাস


ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা এবং তার কার্যকারিতা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। বেশিরভাগ ইসলামী রাষ্ট্রে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব এবং আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় সন্ত্রাসী কার্যক্রম দেখা যায়।


ইসলামী শাসনের অধীনে থাকা দেশগুলোর মধ্যে অধিকাংশ রাজনৈতিক অব্যবস্থা, দুর্নীতি এবং অস্থিরতা prevalent।


সুন্নি-শিয়া দ্বন্দ্ব এবং ধর্মীয় বিভাজন ইসলামী রাষ্ট্রগুলোতে অত্যন্ত উগ্রভাবে কার্যকর হয়েছে, যা ঐতিহ্যবাহী সমাজ ব্যবস্থাকে দুর্বল করেছে।




(খ) ইসলামী রাষ্ট্রে নারীর অবস্থা: পিছিয়ে পড়া সমাজ


ইসলামী রাষ্ট্রগুলোতে নারীদের অবস্থান এবং তাদের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। যেখানে নারীরা সামাজিক ও ধর্মীয় কারণে বিভিন্ন নির্যাতন ও প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়।


প্রথম ইসলামী যুগে নারীদের সমাজের অবহেলিত অংশ হিসেবে গণ্য করা হত এবং তাদের অধিকারের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা ছিল।


আজও ইসলামী রাষ্ট্রে নারীদের শিক্ষায়, কর্মক্ষেত্রে এবং রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ে অধিকাংশ জায়গায় কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে।


নারীরা তল্লাশি, মাথায় হিজাব বাধা এবং বিয়ে, ডিভোর্স প্রক্রিয়ায় অনিয়মিত বিধিনিষেধের শিকার হচ্ছেন, যা মূলত ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার পূর্ব-যুগীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই উদ্ভূত।




(গ) ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থার সংকট: বিজ্ঞান ও যুক্তির প্রতি অবজ্ঞা


ইসলামী রাষ্ট্রগুলোতে শিক্ষা ব্যবস্থার স্তরে ব্যাপক সংকট দেখা যায়, যেখানে বিজ্ঞানের বিকাশ, যুক্তির চর্চা এবং আধুনিক জ্ঞান গ্রহণের জন্য প্রচুর প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।


কুরআন এবং হাদিসের শর্তানুসারে শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালিত হয়, যেখানে বিজ্ঞানের বিষয়গুলো উপেক্ষিত এবং আধুনিক গবেষণা ও চিন্তা-ভাবনার বিকাশ বাধাগ্রস্ত।


ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থায়, বিজ্ঞানী চিন্তাভাবনা, সাম্প্রতিক গবেষণা এবং যুক্তিবাদ অনেক ক্ষেত্রে বাদ দেওয়া হয়েছে, যার ফলে শিক্ষিত সমাজে জ্ঞানী ব্যক্তির সংখ্যা কমে যায় এবং সাধারণ জনগণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতি থেকে পিছিয়ে পড়ে।




(ঘ) অর্থনৈতিক সংকট: ইসলামি রাষ্ট্রগুলোর অর্থনীতি দুর্বল


ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর অধিকাংশের অর্থনীতি বেশ দুর্বল। দেশগুলোর অনেকেই অশিক্ষিত এবং দুর্নীতিতে আক্রান্ত যা তাদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তোলে।


বিশেষত গরীব মুসলিম দেশগুলো যেমন রোহিঙ্গা, ফিলিস্তিনি, সিরিয়ান, আফগানিস্তান, এবং সুদানে মুসলিমদের মধ্যে অতি দরিদ্রতা বিদ্যমান।


ইসলামী রাষ্ট্রের অর্থনীতি ও সামাজিক পরিস্থিতির উপর গভীরভাবে প্রভাব ফেলছে বিশ্বব্যাপী সংঘাত, নানা ধরনের যুদ্ধ এবং রাজনৈতিক দুর্নীতি।




(ঙ) মানবাধিকার লঙ্ঘন: ইসলামি শাসনের অন্ধকার দিক


ইসলামী রাষ্ট্রের শাসকগণ এবং রাজনৈতিক নেতারা মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেন না।


গণতান্ত্রিক অধিকার, মুক্ত বিবেক, এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্য ইসলামী রাষ্ট্রগুলোতে কোন স্থান নেই, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বড় কারণ হিসেবে পরিগণিত হয়।


মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে, গণতন্ত্রের অভাব, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও ধর্মীয় অধিকার কমে যাওয়ার কারণে মানবাধিকার লঙ্ঘন একটি সাধারণ চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।




(চ) ইসলামী রাষ্ট্রে সন্ত্রাস: সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলির উত্থান


ইসলামী রাষ্ট্রে সন্ত্রাসবাদ এবং মৌলবাদী গোষ্ঠী গঠন অনেক দেশেই প্রবল হয়ে উঠেছে।


আল-কায়দা, আইএসআইএস (ISIS), বোকো হারাম সহ অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামকে মৌলবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে।


ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যেখানে ধর্মীয় রীতি এবং রাজনৈতিক আদর্শের ভিত্তিতে সন্ত্রাসবাদ জন্ম নেয়, সেখানে সাধারণ জনগণের জীবনে নিরাপত্তাহীনতা এবং অশান্তি বিরাজমান থাকে।




(ছ) ইসলামী সমাজে সামাজিক অবক্ষয়: অশান্তি এবং সহিংসতা


ইসলামী সমাজগুলোতে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া এবং আফ্রিকার অনেক অঞ্চলে সামাজিক অবক্ষয় এবং সহিংসতা একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।


জীবনযাত্রার মান, বেকারত্ব, বৈষম্য, নির্যাতন এবং ধর্মীয় সহিংসতা মুসলিম সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা আধুনিক সমাজের অগ্রগতির পথে বড় বাধা সৃষ্টি করছে।



১১. ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে সমাজে পরিবর্তন: মিথ্যাচার ও বাস্তবতা
(ক) ইসলাম গ্রহণের পর পরিবর্তন: প্রশ্নবিদ্ধ সত্য
অনেক সময় প্রচার করা হয় যে, ইসলাম গ্রহণ করলে ব্যক্তি বা সমাজের জীবন সুসংগত ও ভালো হয়ে ওঠে। ইসলাম ধর্মকে গ্রহণকারী অপরাধী, খারাপ মানুষ বা কয়েদি অনেক সময় সমাজে ফিরে গিয়ে নিজের জীবনকে সংশোধন করে, এই ধরনের খবর অনেক প্রচার করা হয়।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, ইসলাম গ্রহণের পর যদি কোনো মানুষ পরিবর্তন হয়ে যায়, তবে তা একান্তই তার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার কারণে। ধর্মবিশ্বাসের বদলানোর কারণে সে সত্যিকার অর্থে যদি বিকাশ লাভ করে, তাহলে সেটি ব্যক্তির নিজের অভ্যন্তরীণ চেষ্টার ফল।
সমাজে ইসলামের প্রভাবের কারণে ব্যক্তি নতুন জীবন পেলে সেটি সঠিক সমাজব্যবস্থার জন্য নয়, বরং তার নিজস্ব পছন্দ ও প্রচেষ্টার উপর নির্ভর করে।
ইসলাম গ্রহণ করলে অনেক সময় সামাজিক পরিবর্তন ঘটতে পারে, তবে তা একমাত্র মৌলিক মূল্যবোধ ও আচার-ধর্মের পরিবর্তন থেকে নয়, বরং পূর্ববর্তী বিশ্বাস ও সংস্কৃতির অবলম্বনে ঘটে।
(খ) মিথ্যাচার ও প্রচার: খারাপ লোকদের মধ্যে ইসলামের গ্রহণ
মুমিনরা ইসলাম গ্রহণের খবর প্রচারের সময় জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের কয়েদি বা গরীব জনগণের মধ্যে অনেকেই ইসলামে প্রবেশ করছেন, এর মাধ্যমে তারা বোঝাতে চান যে ইসলাম একটি উন্নত ধর্ম।
কিন্তু এটা ঠিক যে অনেক খারাপ মানুষ, অপরাধী বা সঙ্কটগ্রস্ত ব্যক্তি যখন ইসলাম গ্রহণ করেন, তখন এটি কেবল ধর্মের প্রতি ব্রেইনওয়াশিং না, বরং সামাজিক বা পারিবারিক দিক থেকে জীবন যুদ্ধে হারানো লোকেরা একটি আস্থার জায়গা খুঁজে পাচ্ছে।
ইসলামে প্রবেশ করার সাথে সাথে তাদের জীবন একমাত্র ধর্মীয় বিধি-নিষেধের দিকে চলে আসে; যেখানে তারা নিজেদের অপরাধী মনোভাব এবং বিগত জীবন থেকে পালিয়ে একটি শান্তির খোঁজে আসে।
অন্যদিকে, ভালোমানুষরা যখন ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়, তখন তাদের ব্যাপারে কোনো আলোচনা শোনা যায় না। এটা বোঝায় যে ইসলাম একমাত্র ভালো মানুষের কাছে উপযোগী নয়, বরং এটি দুঃখী ও দুর্বল ব্যক্তিদের জন্য একটি আশ্রয়।
(গ) জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও গরীব দেশগুলোর মুসলিম সমাজ
গরীব মুসলিম দেশগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি একটি বড় সমস্যা। দেশে অর্থনৈতিক সংকট থাকার পরও জনসংখ্যা বৃদ্ধি অত্যন্ত উচ্চ। এর মধ্যে রোহিঙ্গা, ফিলিস্তিনি, সিরিয়ান এবং আফগান মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই দেশগুলোর অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করলেও, তাদের পেটে ভাতের অভাব থাকলেও, নতুন সন্তানের অভাব থাকে না। এটা অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি।
এসব মুসলিম পরিবার সাধারণত সন্তানের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় ধর্মীয় নিয়ম-কানুনের কারণে, যেখানে সঠিক পরিকল্পনা, স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কোনো সঠিক শিক্ষা নেই।
এর ফলে এই গরীব মুসলিম সমাজের জীবন অভাব ও সংকটের মধ্যে চলে যায়, যেখানে অন্তঃসন্তান জনসংখ্যার উপর তীব্র চাপ সৃষ্টি হয়।
আরব দেশগুলো এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত মুসলিম দেশগুলোর মধ্যেও একই সমস্যা দেখা যাচ্ছে, যেখানে জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নতি ও সচেতনতা কম।
(ঘ) প্রোপাগান্ডা: ইসলামকে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন
ইসলামের প্রচারের সময় বলা হয় যে, বিজ্ঞান এবং ধর্মের মেলবন্ধন ঘটে, এবং ইসলাম সব ক্ষেত্রে সঠিক।
প্রোপাগান্ডা এমনভাবে তৈরি করা হয় যেন সারা পৃথিবী বিশ্বাস করে, ইসলামেই একমাত্র বৈজ্ঞানিক যুক্তি রয়েছে, যা বিশ্বের সমস্ত সমস্যা সমাধান করবে।
তবে বাস্তবে, ইসলামিক কুরআন বা হাদীসের মধ্যে অবৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো পূর্ণ রয়েছে, যেগুলো আধুনিক বিজ্ঞানের প্রতি কটু ও অবাস্তব।
উদাহরণস্বরূপ, বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব যেমন ভূপৃষ্ঠের গঠন, জৈবিক বিবর্তন অথবা বিশ্বের সৃষ্টি নিয়ে কুরআন যেসব বক্তব্য দেয় তা সমকালীন বিজ্ঞানের সাথে পুরোপুরি মেলে না।
তারপরও এই মতবাদ প্রচার করা হয় যে বিজ্ঞান ও ইসলামের মিল খুবই নির্ভুল, যা আসলে একটি মিথ্যাচারের অংশ।

১২. ইসলাম এবং প্রাচীন সভ্যতাগুলোর মধ্যে তুলনা: সভ্যতার উন্নতি না অবনতি?

(ক) ইসলাম এবং প্রাচীন সভ্যতার মধ্যে প্রভাব: এক ইতিহাসের ছায়া

ইসলামের আগমন এবং তার প্রচারের সময় পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতা ছিল যেমন, মিসরীয় সভ্যতা, গ্রিক সভ্যতা, এবং রোমান সভ্যতা। এগুলো ছিল উচ্চতর বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও প্রযুক্তিতে অগ্রসর সভ্যতা।

ইসলামের আবির্ভাবের পর একদিকে ইসলামিক স্বর্ণযুগের প্রসঙ্গ আসে, যেখানে মুসলিম সভ্যতা বৈজ্ঞানিক গবেষণার পাশাপাশি শিল্প, সাহিত্য, গণিত, চিকিৎসা, স্থাপত্য ইত্যাদির উন্নতি ঘটায়। তবে ইতিহাসের এই অংশে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, প্রাচীন সভ্যতাগুলোর বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি ইসলামের আগমনের পর কোথায় হারিয়ে গিয়েছিল?

প্রাচীন সভ্যতাগুলোর যা অগ্রগতি ছিল, ইসলামের প্রচারের সময় তার অপরিহার্য অগ্রগতি থেমে যায়। ইসলামের শাসন প্রতিষ্ঠার পর, আধুনিক চিন্তার প্রবণতা অনেকটাই নিরুদ্ধ হয়ে যায়, যা পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের জন্য একটি স্থবিরতার সৃষ্টি করে।



(খ) মুসলিম বিশ্বের স্বর্ণযুগের বাস্তবতা

ইসলামিক স্বর্ণযুগে মুসলিম সভ্যতা যেসব বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, গণিতবিদ, দার্শনিক এবং শিল্পী তৈরি করেছে, তারা তাদের বিজ্ঞান ও বিশ্বভাবনা অন্যান্য জাতির কাছে শিখতে না গিয়ে নিজেদের সীমাবদ্ধতা ও ইসলামিক ধারণার মধ্যে আটকে পড়ে।

তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল, তবে, এগুলোর অনেকাংশেই ছিল মৌলিক বৈজ্ঞানিক চিন্তা ও পরিকল্পনার অভাব। এই কারণে তাদের অগ্রগতি ছিল সীমাবদ্ধ এবং দীর্ঘ সময় ধরে কোনো নতুন প্রযুক্তির সৃজন বা গঠন হয়নি।

একদিকে, যদি ইসলামিক স্বর্ণযুগের বৈজ্ঞানিক কর্মসমূহ তুলনা করা হয় প্রাচীন সভ্যতার সাথে, তবে দেখা যায় যে তারা পরবর্তী যুগে চলে যাওয়ার জন্য নতুন পথে চিন্তা শুরু করতে সক্ষম হয়নি।



(গ) ইসলামের মধ্যস্থতায় সামাজিক পরিবর্তন: উন্নতি নাকি অবনতি?

ইসলামের স্বাভাবিক কাঠামো এবং আইন ও বিধান ব্যবস্থার ফলে সমাজের মধ্যে কিছুটা স্থিতিশীলতা এবং ধর্মীয় শৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল।

তবে এটি যে সামাজিক বা সাংস্কৃতিক উন্নতি ঘটিয়েছে তা বলা কঠিন। প্রকৃতপক্ষে, ইসলামের আইনের আওতায় অনেক ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন, শিক্ষার ক্ষেত্রে অন্ধবিশ্বাস এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ ছিল।

মুসলিম সভ্যতার প্রেক্ষাপটে মুসলিম সমাজের ভেতরেও নারীদের প্রতি বৈষম্য, অন্য ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের প্রতি নিষ্ঠুরতা এবং জাতি-ধর্মের মধ্যে বিভাজন ঘটেছে।



(ঘ) ধর্মীয় শাসন এবং সামাজিক অগ্রগতি: একটি সীমাবদ্ধ চক্র

ধর্মীয় শাসন এবং ধর্মের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক সামাজিক অগ্রগতি ব্যাহত করেছে।

ইসলামি রাজত্বের সময়ে প্রাথমিক যুগে যখন মুসলিম শাসকরা ধর্মীয় আইনে সমাজ পরিচালনা করেছিল, তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা বিজ্ঞান, দর্শন বা স্বাধীন চিন্তা থেকে বিরত ছিল।


ধর্মীয় শাসন যখন একটি দেশে মৌলিক বিধান এবং আইনের ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়, তখন এর প্রভাব হয় সীমিত এবং অনেক ক্ষেত্রেই অগ্রগতি স্তব্ধ হয়ে যায়।


(ঙ) সভ্যতার সমালোচনা: ইসলামের প্রভাব পৃথিবীতে কি সত্যিই অবদান রেখেছে?

ইতিহাসে যখন ইসলামের শক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়, তার প্রভাব কি পৃথিবীর উন্নতির জন্য উপকারী ছিল?

ইসলামের প্রভাব অনেক দেশে ধর্মীয় সংস্কৃতির দোহাই দিয়ে সামাজিক অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করেছে।

শিক্ষার ক্ষেত্রেও, সৃজনশীল চিন্তাভাবনা এবং স্বাধীনতা অনেক সময় ধর্মীয় বিধির কারণে কণ্ঠরোধ হয়েছে।

মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অবিশ্বাসী চিন্তা কে গর্হিত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল।


১৩. ইসলামি বিশ্বে নারীর অবস্থান: অধিকার না নির্যাতন?

(ক) ইসলামের দৃষ্টিতে নারী: সামাজিক ভূমিকা ও প্রতিক্রিয়া

ইসলাম নারীর জন্য বিভিন্ন ধরণের অধিকার ও নিরাপত্তার কথা বললেও, ইতিহাসে দেখা গেছে যে মুসলিম সমাজে নারীদের ওপর অত্যাচার ও শোষণের অনেক ঘটনা ঘটেছে।

মুসলিম সমাজে নারীদের অধিকারের ব্যাপারে ইসলামিক আইন কী বলে, তা নিয়ে নানা মতামত রয়েছে, কিন্তু বাস্তবে নারীদের অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বাধীনতা, শিক্ষা ও সামাজিক অংশগ্রহণের অধিকার প্রায়ই সীমিত ছিল।


ইসলামি আইন অনুযায়ী, নারীদের জন্য বিশেষ কিছু অধিকার রয়েছে, যেমন: বৈবাহিক অধিকার, উত্তরণ অধিকার, এবং অর্থনৈতিক অধিকার, তবে সেগুলি প্রায়ই সমাজের ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে।

বেশিরভাগ মুসলিম দেশে নারী শিক্ষা ও কর্মজীবনে অংশগ্রহণ সীমাবদ্ধ ছিল। নারীদের অনেক ক্ষেত্রেই সামাজিক ও ধর্মীয় গোঁড়ামির শিকার হতে হয়েছে, যেখানে তারা নিজের ইচ্ছা বা স্বাধীনতার বাইরে কাজ করতে পারতেন না।



(খ) নারীকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বানানো: ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও সংস্কৃতির প্রভাব

ইসলাম ও মুসলিম সমাজের প্রভাবের কারণে, অনেক ক্ষেত্রে নারীদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

ইসলামিক রাষ্ট্রে নারীদের ভূমিকা ছিল গৃহকর্মী, স্ত্রীর মধ্যে সীমাবদ্ধ, এবং তাদেরকে রাজনৈতিক বা ধর্মীয় দিক থেকে অধিকতর সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার দেওয়া হয়নি।

প্রাচীন ইসলামী সমাজে নারীদের রক্ষিতা বা যথাযথ কর্তৃত্ব হিসাবে দেখা হয়েছে, কিন্তু তারা সামাজিক জীবনে নিজেদের অবস্থান প্রতিষ্ঠা করতে পারত না।


নারীদের ওপর ধর্মীয় শাসন এবং তথ্য গোপন করার মাধ্যমে তাদের স্বাধীনতা কে সংকুচিত করা হয়। বহু মুসলিম দেশে নারীদের স্বাধীন চিন্তা এবং কর্মজীবনে অংশগ্রহণের অধিকার ছিল ক্ষুন্ন।


(গ) ইসলামের বিবাহ ব্যবস্থা: নারীর অধিকার বা শোষণ?

ইসলামে বিবাহের জন্য নারী ও পুরুষের মাঝে একপ্রকার চুক্তির ধারা রয়েছে, যেখানে নারীর সম্মতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে বাস্তবে দেখা গেছে, বেশ কিছু সমাজে নারীদের পুরুষের অধিকার হিসেবে দেখা হয়েছে এবং তাদের বিবাহের অধিকার ও স্বাধীনতা স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুন্ন ছিল।

পুরুষের একাধিক বিবাহ এবং তিন তালাক নিয়ম নারীদের জীবনে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

একাধিক বিবাহে নারীকে শুধু একজন মালিকের উপপাদ্য হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল।

ইসলামী বিবাহ ব্যবস্থার ফলে নারীদের অধিকার এবং স্বাধীনতা প্রায়ই অস্পষ্ট এবং বিভাজনমূলক হয়ে গেছে, যেখানে নারীকে বিনামূল্যে শোষণের যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।



(ঘ) শিক্ষা ও নারী: ইসলামী সমাজে নারীর শিক্ষার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি

ইসলামে নারী শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে মুসলিম সমাজে নারীদের শিক্ষা অত্যন্ত সীমিত ছিল এবং তাদের ওপর নানা বিধিনিষেধ ছিল।

অনেক মুসলিম দেশে নারীদের স্কুলে যাওয়ার এবং শিক্ষার অধিকার ছিল সীমিত, যা ইসলামিক সমাজের শাসন এবং সামাজিক কাঠামোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।


নারীদের শিক্ষার প্রতি ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা এত বেশি ছিল যে তাদের সামাজিক ও আত্মবিশ্বাসী উন্নতি অনেক সময় সম্ভব হয়নি।

নারীদের শিক্ষার প্রতি সমাজের অবহেলা অনেক সময় তাদের ভবিষ্যৎ এবং স্বাধীন চিন্তা কে রুদ্ধ করে দিয়েছে।



(ঙ) ইসলামী সমাজের নারীরা কেন নির্যাতনের শিকার?

মুসলিম দেশগুলোতে নারীদের নির্যাতন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন মহামারি আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

অনেক মুসলিম দেশে নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণ এসবকে আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকে খুব কম গুরুত্ব দেওয়া হয়, যেখানে নারীকে অধিকার বঞ্চিত করা হয়।

ধর্মীয় আইন ও সংস্কৃতির মধ্যে সঙ্গতি না থাকার কারণে, নারীদের অনেক ক্ষেত্রে শরীরী এবং মানসিক শোষণ করা হয়।

তাদের আত্মবিশ্বাস, শিক্ষা এবং কর্মজীবন প্রায়ই সমাজের গোঁড়া মানসিকতার কাছে হেরে যায়।



(চ) নারীর ধর্মীয় স্বাধীনতা: ইসলামি সমাজে নারীর সামাজিক অবস্থা

ইসলামী সমাজে নারীর ধর্মীয় স্বাধীনতা সীমিত, কারণ ইসলাম নারীদের যে ধর্মীয় শাসন দেয়, তা সামাজিক জীবনে তাদের ভিন্ন রকম বাধাগ্রস্ত করে।

মুসলিম সমাজে নারীদের ধর্মীয় শৃঙ্খলার কারণে স্বাধীন চিন্তা এবং জীবনযাপনের ক্ষেত্র ক্ষীণ হয়ে যায়, যেখান থেকে তারা নিজেদের সঠিক অবস্থান তৈরি করতে পারে না।

ইসলামী বিধি-নিষেধে নারীদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা কে চ্যালেঞ্জ করা হয়, যা তাদের জীবনে নানা ধরণের মানসিক চাপ এবং অবহেলা সৃষ্টি করে।


১৪. ইসলামিক ইতিহাসের অন্ধকার অধ্যায়: যুদ্ধ, গণহত্যা এবং বর্বরতা

(ক) ইসলামের প্রতিষ্ঠার সময়কার যুদ্ধ: শান্তির ধর্ম নাকি যুদ্ধের ধর্ম?

ইসলামের প্রতিষ্ঠা পরবর্তী সময়ে, প্রাথমিক ইসলামী ইতিহাসে যুদ্ধ ও সহিংসতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যদিও ইসলাম শান্তির ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ইতিহাসে ইসলামের বিস্তার একটি রক্তক্ষয়ী পথ ছিল।

বদর যুদ্ধ, উহুদ যুদ্ধ, এবং খন্দক যুদ্ধ সহ অন্যান্য যুদ্ধগুলোতে অজস্র মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল, এবং এসব যুদ্ধের পেছনে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল।

ইসলামের প্রতিষ্ঠার সময়ের মুহাম্মদের নেতৃত্বে বিভিন্ন কুরআন ও হাদিসের মাধ্যমে যুদ্ধের প্রতি আহ্বান করা হয়েছিল, যার ফলে একাধিক যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল। ইসলামের বিস্তারের জন্য শক্তি প্রয়োগ এবং যুদ্ধ অনেক সময় আবশ্যক ছিল।



(খ) গণহত্যা: ইসলামী সাম্রাজ্যবাদের অন্ধকার দিক

ইসলামী সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার, বিশেষ করে উমাইয়া, আব্বাসি এবং মোগল সাম্রাজ্য সময়, কিছু বিতর্কিত এবং অমানবিক কার্যক্রম সংগঠিত হয়েছিল।

ইসলামী সাম্রাজ্যবাদের সম্প্রসারণের জন্য জনসংখ্যার উপর অত্যাচার, গণহত্যা, এবং ধর্মীয় নিপীড়ন চালানো হয়েছিল। যেমন, ইবনে আবি শিহাব এবং হজ্বাজ ইবনে ইউসুফ এর সময়কার গণহত্যা।

আলহা (স্পেন) এবং বালকান অঞ্চলে মুসলিম সেনারা শোষণ এবং হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, যা ইতিহাসের একটি অন্ধকার অধ্যায় হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।



(গ) নারীদের বিরুদ্ধে বর্বরতা: ইসলামের প্রাথমিক সময়ের নির্যাতন

ইসলামের প্রাথমিক যুগে, নারীদের প্রতি সহিংসতা এবং নির্যাতন বিশেষভাবে খারাপ ছিল। ইসলামী সমাজের প্রথম প্রজন্মের মধ্যে নারীদের বিরুদ্ধে এমন বর্বরতা ঘটেছিল যা নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য ছিল।

ইসলামী দৃষ্টিকোণে নারীদের স্বাধীনতা বা মানবাধিকার প্রায়শই ব্যর্থ হয়েছিল, বিশেষত তারা সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন না।

প্রথম খিলাফতের যুগ থেকে, নারীদের লাঠি, শ্বাসরোধ এবং নির্যাতন করা হয়েছিল, এবং তাদের অধিকার প্রায়ই অস্বীকার করা হয়েছিল।



(ঘ) হত্যাযজ্ঞ: মুসলিম শাসকদের অমানবিকতা

মুসলিম শাসকরা, বিশেষত প্রাথমিক ইসলামি যুগের খলিফারা, নিজেদের শক্তি ও আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতন চালিয়েছিলেন।

ইবনে আবি লাহাব এবং হজ্বাজ ইবনে ইউসুফ এর শাসনামলে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও বিশ্বাসী মুসলিমদের নির্যাতন ও হত্যা করা হয়েছিল।

ইবনে তায়মিয়া তার কাজের জন্য পরিচিত ছিলেন, কিন্তু তার নেতৃত্বে অনেক হত্যাযজ্ঞ এবং সমাজের অগ্রহণযোগ্য কার্যক্রম ঘটেছিল।



(ঙ) ইসলামি সাম্রাজ্যবাদ ও ধর্মীয় নিপীড়ন

ইসলামী সাম্রাজ্য যখন একটি বিশাল সাম্রাজ্য হয়ে ওঠে, তখন তা অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন চালিয়ে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ করতে থাকে।

মাজহাবিক দ্বন্দ্ব, শিয়া-সুন্নী সংঘাত, এবং যুদ্ধের মাঝে অন্য ধর্মের অনুসারীদের অত্যাচার ছিল।

মুসলিম সাম্রাজ্যের মধ্যে অনেক সময় ধর্মীয় গোঁড়া ভাবনা এবং সামাজিক চাপে অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়কে ধর্মান্তরিত করা বা নিপীড়ন করা হত।



(চ) ইসলামি যুদ্ধে বিজয়ের পরের তাণ্ডব

ইসলামি শাসকরা যখন কোনো অঞ্চলে বিজয়ী হতেন, তখন সেই অঞ্চলের সাধারণ জনগণের ওপর ধর্মীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তারা সহিংসতা ও নির্যাতন চালাতেন।

বাগদাদ, ফিলিস্তিন, স্পেন ইত্যাদি অঞ্চলে ধর্মীয় যুদ্ধের পরে মানুষকে ইসলামে প্রবেশ করানোর জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে, আর যারা এতে সাড়া দিতেন না তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হত।

ধর্মান্তরিত না হলে হত্যাযজ্ঞ চালানো হত, এবং মুসলিম শাসকদের তাণ্ডব জাতির ইতিহাসে অন্ধকার দিক হিসেবে চিহ্নিত হয়।



(ছ) ইসলামি সমাজে সহিংসতা: আজও চলমান প্রভাব

-আজও মুসলিম দেশের অনেক অঞ্চলে, পুরনো ইসলামী সহিংসতার প্রচলন দেখতে পাওয়া যায়।

*সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং মধ্যযুগীয় যুদ্ধের প্রভাব আজও মুসলিম বিশ্বে একাধিক সংকট সৃষ্টি করছে, যেখানে নারীরা, শিশু এবং সাধারণ জনগণ আক্রান্ত হচ্ছেন।

*মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া, আফ্রিকা সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় যুদ্ধ এবং নির্যাতন আজও চলছে, যা ইসলামের প্রাথমিক ইতিহাসের অন্ধকার অধ্যায়ের ধারাবাহিকতা হতে পারে।


১৫. ইসলামী রাষ্ট্রের অশান্তি: সামাজিক অব্যবস্থা ও সংকট

(ক) ইসলামী শাসনব্যবস্থার বাস্তবতা: রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সন্ত্রাস

ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা এবং তার কার্যকারিতা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। বেশিরভাগ ইসলামী রাষ্ট্রে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব এবং আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় সন্ত্রাসী কার্যক্রম দেখা যায়।

ইসলামী শাসনের অধীনে থাকা দেশগুলোর মধ্যে অধিকাংশ রাজনৈতিক অব্যবস্থা, দুর্নীতি এবং অস্থিরতা prevalent।

সুন্নি-শিয়া দ্বন্দ্ব এবং ধর্মীয় বিভাজন ইসলামী রাষ্ট্রগুলোতে অত্যন্ত উগ্রভাবে কার্যকর হয়েছে, যা ঐতিহ্যবাহী সমাজ ব্যবস্থাকে দুর্বল করেছে।



(খ) ইসলামী রাষ্ট্রে নারীর অবস্থা: পিছিয়ে পড়া সমাজ

ইসলামী রাষ্ট্রগুলোতে নারীদের অবস্থান এবং তাদের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। যেখানে নারীরা সামাজিক ও ধর্মীয় কারণে বিভিন্ন নির্যাতন ও প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়।

প্রথম ইসলামী যুগে নারীদের সমাজের অবহেলিত অংশ হিসেবে গণ্য করা হত এবং তাদের অধিকারের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা ছিল।

আজও ইসলামী রাষ্ট্রে নারীদের শিক্ষায়, কর্মক্ষেত্রে এবং রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ে অধিকাংশ জায়গায় কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে।

নারীরা তল্লাশি, মাথায় হিজাব বাধা এবং বিয়ে, ডিভোর্স প্রক্রিয়ায় অনিয়মিত বিধিনিষেধের শিকার হচ্ছেন, যা মূলত ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার পূর্ব-যুগীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই উদ্ভূত।



(গ) ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থার সংকট: বিজ্ঞান ও যুক্তির প্রতি অবজ্ঞা

ইসলামী রাষ্ট্রগুলোতে শিক্ষা ব্যবস্থার স্তরে ব্যাপক সংকট দেখা যায়, যেখানে বিজ্ঞানের বিকাশ, যুক্তির চর্চা এবং আধুনিক জ্ঞান গ্রহণের জন্য প্রচুর প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।

কুরআন এবং হাদিসের শর্তানুসারে শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালিত হয়, যেখানে বিজ্ঞানের বিষয়গুলো উপেক্ষিত এবং আধুনিক গবেষণা ও চিন্তা-ভাবনার বিকাশ বাধাগ্রস্ত।

ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থায়, বিজ্ঞানী চিন্তাভাবনা, সাম্প্রতিক গবেষণা এবং যুক্তিবাদ অনেক ক্ষেত্রে বাদ দেওয়া হয়েছে, যার ফলে শিক্ষিত সমাজে জ্ঞানী ব্যক্তির সংখ্যা কমে যায় এবং সাধারণ জনগণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতি থেকে পিছিয়ে পড়ে।



(ঘ) অর্থনৈতিক সংকট: ইসলামি রাষ্ট্রগুলোর অর্থনীতি দুর্বল

ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর অধিকাংশের অর্থনীতি বেশ দুর্বল। দেশগুলোর অনেকেই অশিক্ষিত এবং দুর্নীতিতে আক্রান্ত যা তাদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তোলে।

বিশেষত গরীব মুসলিম দেশগুলো যেমন রোহিঙ্গা, ফিলিস্তিনি, সিরিয়ান, আফগানিস্তান, এবং সুদানে মুসলিমদের মধ্যে অতি দরিদ্রতা বিদ্যমান।

ইসলামী রাষ্ট্রের অর্থনীতি ও সামাজিক পরিস্থিতির উপর গভীরভাবে প্রভাব ফেলছে বিশ্বব্যাপী সংঘাত, নানা ধরনের যুদ্ধ এবং রাজনৈতিক দুর্নীতি।



(ঙ) মানবাধিকার লঙ্ঘন: ইসলামি শাসনের অন্ধকার দিক

ইসলামী রাষ্ট্রের শাসকগণ এবং রাজনৈতিক নেতারা মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেন না।

গণতান্ত্রিক অধিকার, মুক্ত বিবেক, এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্য ইসলামী রাষ্ট্রগুলোতে কোন স্থান নেই, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বড় কারণ হিসেবে পরিগণিত হয়।

মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে, গণতন্ত্রের অভাব, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও ধর্মীয় অধিকার কমে যাওয়ার কারণে মানবাধিকার লঙ্ঘন একটি সাধারণ চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।



(চ) ইসলামী রাষ্ট্রে সন্ত্রাস: সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলির উত্থান

ইসলামী রাষ্ট্রে সন্ত্রাসবাদ এবং মৌলবাদী গোষ্ঠী গঠন অনেক দেশেই প্রবল হয়ে উঠেছে।

আল-কায়দা, আইএসআইএস (ISIS), বোকো হারাম সহ অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামকে মৌলবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে।

ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যেখানে ধর্মীয় রীতি এবং রাজনৈতিক আদর্শের ভিত্তিতে সন্ত্রাসবাদ জন্ম নেয়, সেখানে সাধারণ জনগণের জীবনে নিরাপত্তাহীনতা এবং অশান্তি বিরাজমান থাকে।



(ছ) ইসলামী সমাজে সামাজিক অবক্ষয়: অশান্তি এবং সহিংসতা

ইসলামী সমাজগুলোতে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া এবং আফ্রিকার অনেক অঞ্চলে সামাজিক অবক্ষয় এবং সহিংসতা একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জীবনযাত্রার মান, বেকারত্ব, বৈষম্য, নির্যাতন এবং ধর্মীয় সহিংসতা মুসলিম সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা আধুনিক সমাজের অগ্রগতির পথে বড় বাধা সৃষ্টি করছে।

১৬. ইসলামি ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতা: আধ্যাত্মিকতা বা অন্ধ বিশ্বাস?

(ক) ইসলামী আধ্যাত্মিকতা: স্বেচ্ছায় শৃঙ্খলা কিংবা অন্ধ অনুগততা

ইসলামী ধর্মের আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কে অনেকেই দাবি করেন যে, এটা মানুষের আত্মিক উন্নতির দিকে পরিচালিত করে। কিন্তু বাস্তবে, ইসলামী ধর্মের আধ্যাত্মিকতার প্রচার অনেক ক্ষেত্রেই অনুগততার প্রতি অন্ধ শ্রদ্ধা এবং অতিরিক্ত শৃঙ্খলার দিকে মনোযোগ দেয়, যা অনেক সময় মানসিক ও আধ্যাত্মিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করে।

মুসলিমদের জন্য নির্দিষ্ট প্রতিদিনের নামাজ, রমজান মাসের উপবাস ও কুরআন তেলাওয়াত করাটা আধ্যাত্মিক জীবনের অংশ হলেও এটি কখনো কখনো শৃঙ্খলা ও দাসত্বের প্রতি বাধ্যবাধকতা হয়ে দাঁড়ায়।

এভাবে আধ্যাত্মিকতা থেকে ধর্মীয় মিথের দিকে পরিবর্তিত হয়ে যায়, যেখানে অজ্ঞতার মধ্যে থাকা ব্যক্তিরা আত্মিক উন্নতির চেয়ে ধর্মীয় শৃঙ্খলাবদ্ধ হওয়ার দিকে আগ্রহী থাকে।



(খ) মুক্তি, আধ্যাত্মিকতা ও সংস্কৃতির দ্বন্দ্ব: ইসলাম ও আধুনিকতা

ইসলামী সমাজে আধ্যাত্মিকতার প্রকৃত উদ্দেশ্য কী ছিল? অনেক মুসলিম ব্যক্তি ইসলামী আধ্যাত্মিকতার মাধ্যমে মুক্তি বা আধ্যাত্মিক উন্নতি কামনা করেন, কিন্তু ইসলামী শাসনব্যবস্থা তার নিজস্ব সংস্কৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।

আজকের আধুনিক সমাজে, আধ্যাত্মিকতা এবং মানুষের মৌলিক অধিকার - যেমন স্বাধীন চিন্তা, অধিকার ও স্বাধীনতা, সামাজিক যোগাযোগের স্বাধীনতা - এগুলোর মধ্যে অনেক সমঝোতা দেখা যায়।

ইসলামী সমাজের ধর্মীয় আধ্যাত্মিকতা মানুষের মুক্তি ও আত্মিক উন্নতি নয় বরং তাদের সামাজিক পরিস্থিতি ও নৈতিকতার ওপর নিখুঁত প্রভাব ফেলে, যা অনেক সময় অশান্তি এবং অপমান বাড়িয়ে দেয়।



(গ) ইসলামের আধ্যাত্মিক শিক্ষা ও মৌলবাদী চিন্তাভাবনা: দ্বন্দ্বের উত্থান

ইসলামের আধ্যাত্মিকতা সাধারণত মৌলবাদী চিন্তাভাবনা ও অতিবৃদ্ধিত ধর্মীয় উন্মাদনার দিকে ঠেলে দেয়।

মৌলবাদী চিন্তা এমন এক ধরনের চিন্তা যা ধর্মের প্রতি অন্ধ শ্রদ্ধা এবং বৈজ্ঞানিক বা আধুনিক চিন্তার প্রতি এক ধরনের বিদ্বেষ তৈরি করে।

ধর্মের শৃঙ্খলা এমনভাবে চালু করা হয় যে, সাধারণ মানুষের মনের স্বাধীনতা ও চিন্তা ভাবনার বিকাশ থেমে যায়।

ইসলামী আধ্যাত্মিকতা অনেক সময় বিজ্ঞান ও যুক্তির দিকে চলে যেতে বাধা দেয় এবং ধর্মীয় শিক্ষা ও বিশ্বাস নিয়ে সন্ত্রাস ও সহিংসতার পথে পরিচালিত করে।



(ঘ) আধ্যাত্মিক শৃঙ্খলা ও মানবাধিকার: ইসলামী সমাজে সাংস্কৃতিক স্তর

ইসলামী সমাজের আধ্যাত্মিকতার অনেক দিক বিভিন্ন সমাজের মধ্যে অতিরিক্ত শৃঙ্খলা ও অধিকার হরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অনেক মুসলিম সমাজে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ এশিয়াতে, মানুষের আধ্যাত্মিক জীবন এবং ধর্মীয় শৃঙ্খলা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় এবং তাদের ব্যক্তিগত অধিকার সহ স্বাধীনতা ও মুক্ত চিন্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

ইসলামী রাষ্ট্রের ধর্মীয় শৃঙ্খলা অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক কাঠামো এবং মানবাধিকার এর বিরুদ্ধে কাজ করে।



(ঙ) ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও মানবতার প্রতি অবজ্ঞা: ইসলামী আধ্যাত্মিকতার সংকট

ইসলামী আধ্যাত্মিকতার মূল উদ্দেশ্য ধর্মীয় সহিষ্ণুতা এবং মানবিক মূল্যবোধ, কিন্তু বাস্তবে ইসলামী রাষ্ট্রগুলোতে অনেক সময় ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও মনুষ্যত্বের প্রতি অবজ্ঞা দেখা যায়।

যারা ইসলাম ধর্মকে ত্যাগ করেন, তারা সমাজে অপরাধী এবং ধর্মদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত হন, যা মানবিক অধিকার ও সহিষ্ণুতার প্রতি অসম্মান।

ইসলামী আধ্যাত্মিকতা সমাজে ধর্মীয় বৈষম্য, নির্যাতন, এবং মৌলবাদী সহিংসতার দিকে প্ররোচিত করে।



(চ) আধ্যাত্মিকতা বনাম সামাজিক প্রগতির অগ্রগতি: ইসলামী শাসন ও উন্নয়ন

ইসলামী শাসনের অধীনে আধ্যাত্মিকতার প্রতি মনোযোগ দেওয়া হলেও সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রচলিত অনেক সমাজের মধ্যে বিরল।

ধর্মীয় মূল্যবোধ ও আধ্যাত্মিকতা সামাজিক জীবনের উন্নতি ও প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে।

এনটাইটেলমেন্ট এবং ধর্মীয় নিয়মের প্রতি আনুগত্য মানুষকে এক ধরনের আধ্যাত্মিক দুর্বলতা এবং অপক্ষের উন্নয়ন দিকে ঠেলে দেয়, যেখানে সামাজিক, অর্থনৈতিক, এবং সাংস্কৃতিক প্রগতির দিকটি পুরুষানুক্রমিক শাসনব্যবস্থার দ্বারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।


১৭. ইসলাম ও বিজ্ঞান: বৈজ্ঞানিক চিন্তা নাকি অন্ধ বিশ্বাস?

(ক) ইসলামের বৈজ্ঞানিক দিক: অজ্ঞতা নাকি বাস্তবতা?

ইসলামের প্রথম দিকের কিছু বৈজ্ঞানিক উপাদান যেমন আল্লাহর সৃষ্টির বিশদ বর্ণনা এবং কুরআনে উল্লিখিত কিছু প্রকৃতি-সম্পর্কিত তথ্য (যেমন, সৃষ্টি, জ্যোতির্বিদ্যা, এবং ভূতত্ত্বের কিছু প্যাথোলজি) ধর্মীয় মতাদর্শের একটি অংশ হিসেবে দেখা যেতে পারে।

তবে সমস্যা হচ্ছে যে, ইসলামের সৃষ্টির ইতিহাসের অনেক বক্তব্য অবৈজ্ঞানিক এবং প্রাকৃতিক ঘটনাকে অলৌকিক হিসেবে দেখানো হয়। এতে বিজ্ঞান ও যুক্তির দিকে উন্মুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি বন্ধ হয়ে যায় এবং সেগুলিকে অন্ধ বিশ্বাস হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।



(খ) কুরআনে বৈজ্ঞানিক তথ্য: আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিকতা

মুসলিমরা ধর্মীয় বিশ্বাসের অংশ হিসেবে কুরআনের আয়াত এবং হাদীসের বাণী তুলে ধরেন যেগুলো বিজ্ঞানের কিছু বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে দাবি করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, পৃথিবীর গোলাকার আকৃতি বা ভূপৃষ্ঠের সৃষ্টি সম্পর্কিত আয়াত।

তবে, গবেষণায় এবং আধুনিক বিজ্ঞান অনুযায়ী, কুরআনে বর্ণিত তথ্যগুলো অনেক ক্ষেত্রেই বিশ্বাসের কথা হিসেবে থাকতে পারে, কিন্তু সেগুলোর বিজ্ঞানিক ভিত্তি খুব দুর্বল। কিছু কথাই হয়তো সময়ের সাথে সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাংঘর্ষিক।



(গ) ইসলামের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি: ধর্মীয় গোঁড়ামি বা মুক্ত চিন্তার বাধা

ইসলাম যে বিজ্ঞানকে প্রতিপন্ন করে, তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং বিশ্বাসের অন্ধত্বের দিকে পরিচালিত করে।

আধুনিক বিজ্ঞানে এমনকি বিজ্ঞানী ও গবেষকরা কোনো বিশেষ ধর্মের শাসন না মেনে স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে শিখেছেন। কিন্তু ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মীয় মতবাদ একে অন্যের কাছে আস্থা রাখার জন্য বিজ্ঞানকে বিশ্বাসের বিপরীতে উপস্থাপন করে, যা জ্ঞানী মানুষের চিন্তার গতি বাধাগ্রস্ত করে।

মুসলিমদের মধ্যে এক ধরনের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির অমুকোলন ধর্মীয় বিশ্বাসের বাইরে চিন্তা করা বা প্রশ্ন করা নিরুৎসাহিত করে। বিজ্ঞানী বিশ্লেষণ এবং আলোচনামূলক বিজ্ঞান এসবের মধ্যে সঠিক তথ্যের প্রতি তাদের মনোভাবের পরিবর্তন আসে না।



(ঘ) ইসলামি ধর্ম ও মানবাধিকার: ধর্মীয় বন্ধন ও মুক্তির অস্বীকৃতি

ইসলামী সমাজের মধ্যে, মানবাধিকার, স্বাধীনতা এবং সমতার ধারণা খুব বেশি ধ্রুবক নয়। ধর্মীয় শাসন এবং কঠোর বিধি-নিষেধের মধ্যে এই মৌলিক অধিকারগুলো প্রায়শই অগ্রাহ্য হয়।

ইসলামী রাষ্ট্রে মহিলাদের অধিকার, মাইনরিটির অধিকার এবং মুক্ত চিন্তার অধিকার সীমাবদ্ধ থাকে, যার কারণে তা সমাজে অব্যক্তিত ও বন্ধনী সৃষ্টি করে।

মুসলিমরা প্রায়ই ইসলামকে ধর্ম হিসেবে দেখান, যা কেবল আধ্যাত্মিক মুক্তির জন্য উপযুক্ত। তবে, শাসক ও তত্ত্বাবধায়করা কখনো কখনো এটি অন্ধ বিশ্বাসের আড়াল হিসেবে ব্যবহার করে মানবাধিকার খর্ব করে। ইসলামি সমাজে যেসব চ্যালেঞ্জ উঠেছে, তা আসলে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে চলে।



(ঙ) ইসলামী রাষ্ট্র ও সমাজে গঠনমূলক পরিবর্তন: সংস্কৃতি ও সমাজের উন্নতির অভাব

ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে উন্নতির বেশিরভাগ সূচক দেখে গঠনমূলক পরিবর্তন ও সামাজিক উন্নতি দেখা যায় না।

যেখানে বেশিরভাগ মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারী-পুরুষের সমতা, এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ক্রমাগত ভাবে পিছিয়ে পড়ছে।

সমাজের উপর ইসলামী আদর্শ চাপিয়ে দিয়ে তারা বৈজ্ঞানিক উন্নয়ন ও প্রযুক্তির অগ্রগতি অর্জন করার বদলে নিজেদের সংস্কৃতির ভিতরে আটকে আছে। ইসলামী রাষ্ট্রের শাসন কাঠামো কখনো কখনো পরিবর্তন, কল্যাণ, এবং সামাজিক অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।



(চ) ইসলামের মৌলবাদী ধারণা ও বৈষম্য: সমাজে সহিংসতা ও অশান্তি

ইসলামের মধ্যে মৌলবাদী চিন্তা অনেক সময় অশান্তি, সহিংসতা, এবং ধর্মীয় উগ্রপন্থা প্রবর্তিত করে।

যেখানে মুমিনদের অন্ধ বিশ্বাস এবং ধর্মীয় প্রচার অনেক সময় ভিন্নধর্মী মানুষদের প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্য সৃষ্টি করে।

ইসলামি মৌলবাদীরা তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি আর অন্য ধর্মের প্রতি বৈষম্য সম্পর্কিত অনেক সময় সমাজে ধর্মীয় সহিংসতার উৎস হয়ে দাঁড়ায়।


Post a Comment

Previous Post Next Post