বিজ্ঞানময় কিতাব: সত্য নাকি গোঁজামিল

 

কুরআনের বৈজ্ঞানিক দাবি: আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে সমন্বয় বা সাংঘর্ষিকতা?

মুসলিমরা প্রায়ই দাবি করে যে কুরআন হচ্ছে “বৈজ্ঞানিক কিতাব” এবং এতে আধুনিক বিজ্ঞানের অনেক তথ্য পূর্বেই দেওয়া হয়েছে। তাদের মতে, বিজ্ঞান কুরআনের সত্যতাকে প্রমাণ করে, আর কুরআনে দেওয়া তথ্যগুলো এতটাই নিখুঁত যে এগুলো কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই দাবিগুলো কতটা বাস্তবসম্মত?

১. বৈজ্ঞানিক দাবি বনাম বাস্তবতা

কুরআনে বিভিন্ন আয়াতের মধ্যে বিজ্ঞান সম্পর্কিত কিছু বক্তব্য পাওয়া যায়। কিন্তু এগুলো কি সত্যিই আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে মিলে, নাকি সেগুলোকে জোরপূর্বক বিজ্ঞানের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে?

উদাহরণস্বরূপ, অনেক মুসলিম দাবি করে যে কুরআনে ভ্রূণের বৃদ্ধি সম্পর্কে যা বলা হয়েছে (সূরা আল-মু'মিনুন ২৩:১৪), তা আধুনিক ভ্রূণবিদ্যার সাথে মিলে যায়। কিন্তু বাস্তবে কি এটি সত্য?


২. বিজ্ঞান কি কুরআনের সত্যতা প্রমাণ করে?

বিজ্ঞান একটি পরীক্ষিত ও পর্যবেক্ষণযোগ্য প্রক্রিয়া। বৈজ্ঞানিক কোনো তত্ত্ব বারবার যাচাই-বাছাই করে প্রমাণিত হতে হয়। কিন্তু কুরআনের “বৈজ্ঞানিক দাবিগুলো” সাধারণত ব্যাখ্যার উপর নির্ভরশীল এবং যেকোনো সময় পরিবর্তনশীল।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, মুসলিমরা কুরআনের আয়াতের নতুন ব্যাখ্যা দাঁড় করায়, যেন তা বিজ্ঞানের সাথে মিলে যায়। কিন্তু যদি বিজ্ঞান পরিবর্তিত হয়, তাহলে কুরআনের ব্যাখ্যাও পরিবর্তন করতে হয়। প্রশ্ন হলো, সত্যিকারের বৈজ্ঞানিক গ্রন্থের ব্যাখ্যা কি এভাবে পরিবর্তন হয়?


৩. অনেক তথ্য আগে থেকেই জানা ছিল

মুসলিমরা দাবি করে, কুরআন এমন কিছু বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রদান করেছে যা মুহাম্মদের সময়ের মানুষ জানত না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, এসব তথ্য অনেক আগেই গ্রীক, ভারতীয় ও পারস্য সভ্যতায় পাওয়া গিয়েছিল।

উদাহরণস্বরূপ, ভ্রূণ বিকাশ নিয়ে গ্রীক দার্শনিক আরিস্টটল (খ্রিস্টপূর্ব ৩৮৪-৩২২) এবং রোমান চিকিৎসক গ্যালেন (খ্রিস্টপূর্ব ১৩০-২১০) বিস্তারিত আলোচনা করেছিলেন। তাহলে কুরআনের তথ্যে নতুন কিছু কী?


৪. কুরআনের অস্পষ্ট ভাষা: বিজ্ঞান না কাব্য?


কুরআনের বেশিরভাগ আয়াত অস্পষ্ট এবং দার্শনিক ব্যাখ্যা নির্ভর। উদাহরণস্বরূপ, “আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবীকে একত্রে রেখেছিলেন, তারপর তাদের আলাদা করলেন” (সূরা আল-আম্বিয়া ২১:৩০)। মুসলিমরা বলে, এটি বিগ ব্যাং-এর প্রমাণ। এটা যদি সত্য হয় তাহলে অন্যান্য গ্রহ ও পৃথিবীর বয়স এক হতো। কিন্তু এমনটি নয়। বরং প্রত্যেক গ্রহের বয়স আলাদা আলাদা।

যদি সত্যিকারের বিজ্ঞান দেওয়া হতো, তাহলে কুরআনে E=mc², DNA, কোয়ান্টাম ফিজিক্স, কোষের গঠন, মহাবিশ্বের প্রকৃত বিস্তৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য থাকত। কিন্তু এমন কিছুই কুরআনে নেই।


৫. কুরআন কি বিজ্ঞানের পূর্বাভাস দেয়?

অনেক মুসলিম দাবি করে যে কুরআনে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে (সূরা আয-যারিয়াত ৫১:৪৭)। কিন্তু বাস্তবে আয়াতটির আরবি ভাষ্য ব্যাখ্যা করলে দেখা যায়, সেখানে স্পষ্টভাবে মহাবিশ্বের প্রসারণের কথা বলা হয়নি। বরং এটি একটি সাধারণ বক্তব্য যা বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যায়।

বৈজ্ঞানিক ভবিষ্যদ্বাণী যদি সত্যিই থাকত, তাহলে আজকের বিজ্ঞানীরা কুরআন পড়েই নতুন আবিষ্কার করতেন। কিন্তু বাস্তবে এমন কিছু কখনোই ঘটেনি।

কুরআন যদি সত্যিই বিজ্ঞানের পূর্বাভাস দিত, তাহলে তা আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কারের আগেই মানুষকে সাহায্য করত। কিন্তু বাস্তবতা হলো, মুসলিমরা বিজ্ঞানের নতুন আবিষ্কারকে কুরআনের সাথে মেলানোর চেষ্টা করে, যা আসলে "confirmation bias" বা "নিজের বিশ্বাসকে বৈজ্ঞানিকভাবে সত্যি প্রমাণ করার চেষ্টা" ছাড়া কিছুই নয়।


৬. কুরআনের বৈজ্ঞানিক ভুল

কুরআন যদি সত্যিই বিজ্ঞানসম্মত হতো, তাহলে তাতে কোনো বৈজ্ঞানিক ভুল থাকার কথা নয়। কিন্তু বাস্তবে অনেক আয়াতে স্পষ্ট বৈজ্ঞানিক ভুল পাওয়া যায়।

সূর্য অস্ত যায় কাদা পানিতে?

সূরা আল-কাহফ ১৮:৮৬-তে বলা হয়েছে যে, “যখন সে (জুলকারনাইন) সূর্যাস্তের স্থানে পৌঁছাল, তখন দেখল সূর্য কাদা পানিতে অস্ত যাচ্ছে।”

আধুনিক বিজ্ঞান অনুযায়ী, সূর্য কোথাও অস্ত যায় না; এটি পৃথিবীর আহ্নিক গতির কারণে আমাদের দৃষ্টিতে পরিবর্তিত হয়। তাহলে কুরআনে এ ধরনের বর্ণনা কেন?


পৃথিবী কি সমতল নাকি গোলাকার?

কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে বলা হয়েছে, পৃথিবীকে “বিছানো” বা “গালিচার মতো” বানানো হয়েছে (সূরা আন-নাবা ৭৮:৬, সূরা আল-গাশিয়াহ ৮৮:২০)।

যদি কুরআন বিজ্ঞানসম্মত হতো, তাহলে স্পষ্টভাবে বলা হতো যে পৃথিবী গোলাকার এবং মহাবিশ্বে ঘূর্ণনরত।



৭. মানুষ কি মাটির থেকে নাকি শুক্র থেকে সৃষ্টি?

কুরআনে বিভিন্ন জায়গায় মানুষের সৃষ্টির উৎস সম্পর্কে স্ববিরোধী কথা বলা হয়েছে।

একবার বলা হয়েছে মানুষ মাটি থেকে সৃষ্টি (সূরা আস-সাজদাহ ৩২:৭, সূরা আল-হিজর ১৫:২৬)।

আবার বলা হয়েছে, মানুষ ‘আলাকা’ (রক্তের দলা) থেকে সৃষ্টি (সূরা আলাক ৯৬:২)।

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, শুক্র থেকে সৃষ্টি (সূরা আল-কিয়ামাহ ৭৫:৩৭-৩৮)।

বিজ্ঞান অনুযায়ী, মানুষ আসলে ডিএনএ-নির্ভর কোষ বিভাজনের মাধ্যমে তৈরি হয়। তাহলে কুরআনের এসব স্ববিরোধী বর্ণনার ব্যাখ্যা কী?

৮. আকাশের ছাদ ও গ্রহ-নক্ষত্রের পতন


কুরআনে বলা হয়েছে, আকাশ একটি শক্তিশালী ছাদ বা ছত্রছায়া (সূরা আল-আম্বিয়া ২১:৩২)।

বিজ্ঞান অনুযায়ী, মহাশূন্যে এমন কোনো ছাদ নেই। এটি মূলত শূন্যতা, যেখানে গ্রহ-নক্ষত্র, গ্যাস ও মহাজাগতিক বস্তু ভাসমান অবস্থায় আছে।

সূরা আত-তারিক ৮৬:২-৩-এ বলা হয়েছে, প্রতিটি নক্ষত্র বা তারা “তীক্ষ্ণ আলো ছড়ায়” এবং এগুলো পাহারাদার।

বাস্তবে, নক্ষত্র বা তারা কোনো পাহারাদার নয়; তারা বিশাল গ্যাসীয় গোলক, যা নিউক্লিয়ার ফিউশনের মাধ্যমে জ্বলতে থাকে।


৯. কুরআনের আকাশ সংক্রান্ত ভুল ধারণা

৯.১ আকাশ কি আসলে একটি ছাদ?

কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে আকাশকে একটি ছাদ বা ঢাল হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ,

“আমি আকাশকে এক সুদৃঢ় ছাদ বানিয়েছি, কিন্তু তারা এর নিদর্শন সম্পর্কে অবহেলা করে।” (সূরা আল-আম্বিয়া ২১:৩২)


এখানে আকাশকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যেন এটি কোনো কঠিন পদার্থের তৈরি ছাদ, যা পৃথিবীকে ঢেকে রেখেছে।

বিজ্ঞান কী বলে?


আকাশ বলতে সাধারণত আমরা বায়ুমণ্ডল (Atmosphere) বা মহাশূন্যকে (Space) বুঝি।

বায়ুমণ্ডল বিভিন্ন গ্যাসের সংমিশ্রণ, যা মহাশূন্যের শূন্যতার সাথে কোনোভাবেই কঠিন কোনো ছাদের মতো নয়।

মহাশূন্যে (Outer Space) কোনো কঠিন স্তর বা ছাদ নেই। এটি অসীম শূন্যতা, যেখানে গ্রহ-উপগ্রহ, গ্যাস ও ধূলিকণার সমাহার রয়েছে।

যদি আকাশ সত্যিই একটি কঠিন ছাদ হতো, তবে রকেট বা মহাকাশযান কখনোই পৃথিবীর বাইরে যেতে পারত না।


ইসলামী ব্যাখ্যা ও অসংগতি

অনেক ইসলামপন্থী বলেন, এখানে "ছাদ" বলতে ওজোন স্তর বোঝানো হয়েছে, যা পৃথিবীকে সৌর বিকিরণ থেকে রক্ষা করে। কিন্তু এটি ভুল ব্যাখ্যা, কারণ—

ওজোন স্তর কোনো কঠিন বস্তু নয়; এটি অক্সিজেনের (O₃) একটি স্তর, যা নির্দিষ্ট মাত্রার ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে।

ওজোন স্তরের কার্যকারিতা সম্পূর্ণ আলাদা; এটি মহাকাশের উন্মুক্ত শূন্যতার সাথে তুলনীয় নয়।

এছাড়া, কুরআনে ওজোন স্তরের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। শুধুমাত্র "ছাদ" শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, যা পুরাতন যুগের মানুষদের স্বর্গীয় গম্বুজের ধারণার সাথে মিলে যায়।

আকাশকে "ছাদ" বলা বিজ্ঞানসম্মত নয়। এটি সেই সময়ের মানুষের ভুল ধারণা, যারা ভাবত আকাশ একটি কঠিন স্তর বা গম্বুজের মতো। কুরআন যদি সত্যিই অলৌকিক জ্ঞানসম্পন্ন কিতাব হতো, তাহলে এতে মহাবিশ্বের প্রকৃত গঠন সম্পর্কে সঠিক তথ্য থাকত।


১০. তারকা কি আসলে ‘তীক্ষ্ণ আলো ছড়ানো পাহারাদার’?

১০.১ কুরআনের দাবি:

কুরআনে তারকাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে—

“আমি নিকটতম আকাশকে প্রদীপ (তারা) দ্বারা সুসজ্জিত করেছি এবং এগুলোকে শয়তানদের উপর নিক্ষেপযোগ্য অস্ত্র বানিয়েছি।” (সূরা আল-মুলক ৬৭:৫)

“আকাশে নক্ষত্র রয়েছে, যা তীক্ষ্ণ আলো ছড়ায় এবং পাহারাদার।” (সূরা আত-তারিক ৮৬:২-৩)


এখানে বোঝানো হয়েছে, তারকাগুলো শুধু আলো ছড়ায় না, বরং শয়তানদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয় এবং পাহারাদারের কাজ করে।

১০.২ বিজ্ঞান কী বলে?

আসলে তারকারা বিশাল, জ্বলন্ত গ্যাসীয় গোলক, যা মূলত হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের পারমাণবিক সংযোগের ফলে শক্তি উৎপন্ন করে।

প্রতিটি তারকার ভেতরে নিউক্লিয়ার ফিউশন হয়, যেখানে হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম তৈরি হয় এবং বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়।

তারা কোনো "পাহারাদার" বা "নিক্ষেপযোগ্য অস্ত্র" নয়। এগুলো মহাবিশ্বের সাধারণ জ্যোতিষ্ক মাত্র।

কিছু ইসলামপন্থী দাবি করেন, "নিক্ষেপযোগ্য অস্ত্র" বলতে উল্কাপাত বোঝানো হয়েছে। কিন্তু—

উল্কা বা শুটিং স্টার (Shooting Star) কোনো তারকা নয়, বরং মহাশূন্যের ধূলিকণা বা পাথর, যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে জ্বলে ওঠে।

কুরআনের আয়াতে "শয়তান তাড়ানোর অস্ত্র" বলতে উল্কাপাত বোঝালে, তাহলে প্রশ্ন ওঠে— মহাশূন্যের যে বিশাল অংশে বায়ুমণ্ডলই নেই, সেখানে এই উল্কাগুলো কিভাবে শয়তানদের আঘাত করছে?



১০.৩ কুরআনের ভুল ও ধর্মীয় কুসংস্কার

প্রাচীন যুগের মানুষরা ভাবত, তারকারা আকাশে ঈশ্বরের বাহিনী হিসেবে কাজ করে এবং এগুলো দিয়ে অশুভ আত্মাদের তাড়ানো হয়। কুরআনের এই বক্তব্য সেই পুরাতন বিশ্বাসেরই প্রতিফলন।

তারকাদের সম্পর্কে কুরআনের তথ্য সম্পূর্ণরূপে অজ্ঞানতাপূর্ণ ও ভুল। এটি সেই সময়ের মানুষের কুসংস্কারকে বৈধতা দেয়, কিন্তু আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পূর্ণ ভিন্ন বাস্তবতা তুলে ধরেছে।


১১. সূর্য ও চাঁদের গতিবিধি নিয়ে কুরআনের ভুল ধারণা

১১.১ কুরআনের দাবি:

কুরআনে সূর্য ও চাঁদের চলাচল সম্পর্কে বলা হয়েছে—

“এবং সূর্য, সে নিজ কক্ষপথে পরিভ্রমণ করে।” (সূরা ইয়াসিন ৩৬:৩৮)

“এবং চাঁদের জন্য আমি বিভিন্ন স্তর নির্ধারণ করেছি যতক্ষণ না তা পুরনো শুকনো খেজুর শাখার মতো হয়ে যায়।” (সূরা ইয়াসিন ৩৬:৩৯)

“সূর্য ও চাঁদ নির্দিষ্ট পথে চলে।” (সূরা আর-রাহমান ৫৫:৫)


এই আয়াতগুলো থেকে বোঝা যায়, কুরআন মনে করে সূর্য ও চাঁদ নির্দিষ্ট পথে ঘুরছে এবং সূর্যের নিজস্ব কক্ষপথ রয়েছে।

১১.২ বিজ্ঞান কী বলে?


আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে কুরআনের এই ব্যাখ্যায় বড় ধরনের সমস্যা রয়েছে।

1. সূর্যের কক্ষপথ সংক্রান্ত বিভ্রান্তি:

কুরআনের ভাষা থেকে বোঝা যায়, সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে। অথচ আসলে, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরছে, সূর্য স্থির নয়, কিন্তু তা পৃথিবীর চারদিকে নয়, বরং মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রের চারদিকে ঘুরছে।

সূর্য প্রতি ২২৫-২৫০ মিলিয়ন বছরে একবার গ্যালাক্সির কেন্দ্র প্রদক্ষিণ করে, কিন্তু এটি দিনের বা বছরের সাথে কোনো সম্পর্কিত গতিবিধি নয়।



2. চাঁদের গতিবিধির ভুল ব্যাখ্যা:

চাঁদ আসলে পৃথিবীর চারদিকে আবর্তন করে এবং সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে।

“পুরনো শুকনো খেজুর শাখার মতো” হওয়ার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। এটি মূলত দৃশ্যমান পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অনুমান করা কাব্যিক ব্যাখ্যা।




১১.৩ ইসলামপন্থীদের ব্যাখ্যার অসঙ্গতি

অনেক ইসলামপন্থী দাবি করেন যে, “সূর্যের নিজ কক্ষপথে পরিভ্রমণ” আসলে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রকে নির্দেশ করে। কিন্তু—

কুরআনের ভাষা অনুসারে, সূর্যের এই পরিভ্রমণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বর্ণিত হয়েছে, যা ভুল কারণ সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে না, বরং পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরছে।

যদি সূর্য তার কক্ষপথে চলার অর্থ গ্যালাক্সির কেন্দ্রের চারদিকে পরিভ্রমণ হয়, তাহলে চাঁদের গতিবিধির প্রসঙ্গ একই আয়াতে কেন এসেছে? এটি প্রমাণ করে যে কুরআন আসলে সূর্য ও চাঁদের আবর্তনকে একসাথে একই ধরনের কক্ষপথ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে, যা ভুল।

কুরআনের সূর্য ও চাঁদের গতিবিধি সংক্রান্ত বক্তব্য ভুল ও বৈজ্ঞানিকভাবে অগ্রহণযোগ্য। এটি সেই সময়ের মানুষদের ভুল ধারণার প্রতিফলন, যারা ভাবত সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে এই ধারণা সম্পূর্ণ অমূলক।


১২. কুরআনে পৃথিবীর আকার নিয়ে বিভ্রান্তি

১২.১ কুরআনের দাবি:

কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে পৃথিবীর আকার সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়—

“এবং আমি পৃথিবীকে সম্প্রসারিত করেছি এবং তাতে সুদৃঢ় পর্বতমালা স্থাপন করেছি।” (সূরা কাহাফ ১৮:৪৭)

“এবং আমি পৃথিবীকে বিছিয়ে দিয়েছি, এবং কত উত্তমভাবে আমি বিছিয়েছি!” (সূরা আয-জারিয়াত ৫১:৪৮)

“এবং আমি পৃথিবীকে গবাদিপশুর জন্য বিছানা করেছি।” (সূরা আন-নাবা ৭৮:৬)

“এবং তিনি পরে পৃথিবীকে সমতল করেছেন।” (সূরা নাজিআত ৭৯:৩০)


১২.২ কুরআন কি পৃথিবীকে সমতল বলছে?

কুরআনের এই আয়াতগুলোতে পৃথিবীর আকৃতিকে "বিছানো," "সম্প্রসারিত," "সমতল" বলা হয়েছে, যা সাধারণভাবে সমতল পৃথিবীর ধারণার সাথে মিলে যায়।

"বিছানো" শব্দটি ব্যবহার করা হয় মাটির বা সমতল জায়গার প্রসঙ্গে।

"সম্প্রসারিত" বলা হয় সাধারণত কোনো সমতল বস্তুর ক্ষেত্রেও।

"গবাদিপশুর জন্য বিছানা" বলার মাধ্যমে এটিকে প্রাণীদের জন্য একটি সমতল ভূমিরূপে দেখানো হয়েছে।


১২.৩ ইসলামপন্থীদের ব্যাখ্যা:

অনেক ইসলামপন্থী দাবি করেন যে, “নাজিআত ৭৯:৩০” আয়াতে "দাহাহা" শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ উটপাখির ডিমের মতো, যা পৃথিবীর গোলাকার হওয়ার প্রমাণ দেয়।

কিন্তু বাস্তবতা হলো:

আরবি ভাষায় "দাহাহা" শব্দের মূল অর্থ “সমতল বা প্রসারিত করা”, যা কোনোভাবেই গোলাকার অর্থ দেয় না।

প্রাচীন ব্যাখ্যাকারীরাও কখনো একে গোলাকার বলেননি, বরং তারা পৃথিবীকে সমতল মনে করতেন।

উটপাখির ডিম পুরোপুরি গোল নয়, বরং কিছুটা ওভাল আকৃতির। কিন্তু কুরআনের কোথাও এমন কিছু বলা হয়নি যে পৃথিবী কিছুটা চ্যাপ্টা গোল।


১২.৪ বিজ্ঞান কী বলে?

বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে,

পৃথিবী একটি গোলাকার বস্তু (Oblate Spheroid), যা মেরুর দিকে কিছুটা চাপা এবং বিষুবরেখার দিকে কিছুটা বিস্তৃত।

পৃথিবীর বক্রতা প্রমাণ করার জন্য গ্রহের ছায়া, সমুদ্রের দিগন্ত, এবং মহাকাশ থেকে তোলা ছবিগুলো সুস্পষ্ট প্রমাণ।

কুরআনের ভাষা ও প্রাচীন ব্যাখ্যার ভিত্তিতে স্পষ্ট হয় যে, কুরআন পৃথিবীকে সমতল মনে করত। আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে এর কোনো মিল নেই। যদি কুরআন সত্যিই আল্লাহর পক্ষ থেকে আসত, তবে এতে স্পষ্টভাবে বলা থাকত যে পৃথিবী একটি গোলাকার বস্তু, যা মহাশূন্যে ভাসছে। কিন্তু তা বলা হয়নি, বরং এতে সেই সময়ের মানুষদের প্রচলিত ভুল ধারণার প্রতিফলন ঘটেছে।

১৩. সূর্য ও চন্দ্রের গতি নিয়ে বিভ্রান্তি

১৩.১ কুরআনের দাবি:

কুরআন সূর্য ও চন্দ্রের গতি সম্পর্কে বলে—

“আর তিনিই সূর্য ও চন্দ্রকে কার্যকর করেছেন; প্রত্যেকেই নির্দিষ্ট কক্ষপথে প্রবাহিত হচ্ছে।” (সূরা আম্বিয়া ২১:৩৩)

“সূর্য নিজের নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে।” (সূরা ইয়াসিন ৩৬:৩৮)

“এবং চন্দ্রের জন্য আমরা বিভিন্ন মনযিল নির্ধারণ করেছি, অবশেষে তা শুকনো খেজুর গাছের শাখার মতো হয়ে যায়।” (সূরা ইয়াসিন ৩৬:৩৯)

“সূর্যকে তার উদয়স্থলে থামিয়ে রাখা হলো।” (সাহিহ বুখারি ৩২০৮)


১৩.২ কুরআনের সমস্যাসমূহ:


(১) সূর্যের নির্দিষ্ট গন্তব্য

কুরআন বলছে সূর্য একটি নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে, যা শুনে মনে হয়, সূর্য একটি নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে থেমে যাবে।

কিন্তু বাস্তবতা হলো:

সূর্য মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে প্রদক্ষিণ করছে, কিন্তু এটি কোনো নির্দিষ্ট গন্তব্যে থামবে না।

বিজ্ঞান বলে, সূর্য গ্যালাক্সির কেন্দ্রের চারদিকে ২২৫-২৫০ মিলিয়ন বছরে একবার আবর্তন সম্পন্ন করে।

সূর্যের "গন্তব্যে থামা" বা "বিশ্রাম নেওয়া" ধারণাটি বিজ্ঞানসম্মত নয়।


(২) সূর্য ও চন্দ্রের একই কক্ষপথে চলা

কুরআনের ভাষা অনুযায়ী মনে হয় সূর্য ও চন্দ্র একই ধরনের কক্ষপথে চলছে।

কিন্তু বাস্তবতা হলো:

চাঁদ পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে, আর পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘোরে।

সূর্য কোনো গ্রহের চারপাশে ঘোরে না, বরং গ্যালাক্সির কেন্দ্রের চারদিকে ঘুরছে।

যদি সূর্য ও চন্দ্র একই ধরনের কক্ষপথে থাকত, তাহলে পৃথিবীতে দিন-রাতের পরিবর্তন ভিন্ন রকম হতো।


(৩) সূর্যের থেমে যাওয়া

হাদিসে বলা হয়েছে যে, "সূর্য তার উদয়স্থলে থেমে থাকে, তারপর অনুমতি চায়, আল্লাহ অনুমতি দিলে আবার ওঠে।" (বুখারি ৩২০৮)

কিন্তু বাস্তবতা হলো:

সূর্য কখনো কোথাও থামে না।

পৃথিবীর আহ্নিক গতি (rotation) দিন-রাত সৃষ্টি করে, সূর্যের থেমে যাওয়ার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

এই ভুল ধারণা সেই যুগের মানুষের চিন্তার প্রতিফলন, যারা মনে করত সূর্যই পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে।


১৩.৩ ইসলামপন্থীদের ব্যাখ্যা:

অনেকে দাবি করেন, "কুরআনে সূর্য ও চন্দ্রের কক্ষপথের কথা বলা হয়েছে, যা প্রমাণ করে কুরআন আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যা জানত।"

কিন্তু সমস্যাগুলো হলো:

এখানে "সূর্য-চন্দ্র একই পথে চলে" বলা হয়েছে, যা ভুল।

সূর্যের জন্য "নির্দিষ্ট গন্তব্য" বলা হয়েছে, যা অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর।

সূর্যের থেমে থাকার হাদিস একেবারেই বিজ্ঞানবিরোধী।


১৩.৪ বিজ্ঞান কী বলে?

সূর্য স্থির নয়, এটি প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৭২০,০০০ কিমি গতিতে গ্যালাক্সির কেন্দ্রের চারপাশে ঘুরছে।

চাঁদ পৃথিবীর চারপাশে আবর্তিত হয়, কিন্তু এটি সূর্যের মতো নিজে থেকে আলো উৎপন্ন করে না।

সূর্য কখনো থেমে যায় না বা অনুমতি চায় না, বরং এটি সর্বদা গতিশীল।

কুরআনের সূর্য ও চন্দ্র সম্পর্কিত বর্ণনাগুলো মধ্যযুগীয় মানুষের চিন্তার প্রতিফলন, যেখানে মনে করা হতো সূর্য ও চন্দ্র একইভাবে চলে। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান দেখিয়েছে যে, কুরআনের এই বর্ণনাগুলো প্রকৃত বাস্তবতার সাথে মেলে না। যদি কুরআন সত্যিই "বৈজ্ঞানিক কিতাব" হতো, তাহলে এতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকত যে, "পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে, আর সূর্য গ্যালাক্সির কেন্দ্রের চারদিকে ঘোরে।" কিন্তু তা বলা হয়নি।


১৪. পৃথিবীর আকৃতি: সমতল নাকি গোলাকার?

১৪.১ কুরআনের দাবি:

কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে পৃথিবীর আকৃতি সম্পর্কে বলা হয়েছে—

1. “এবং পৃথিবীকে আমি বিছিয়ে দিয়েছি।” (সূরা নাযিয়াত ৭৯:৩০)


2. “তিনিই সেই সত্তা যিনি পৃথিবীকে তোমাদের জন্য বিস্তৃত করেছেন।” (সূরা যুখরুফ ৪৩:১০)


3. “এবং আমি পৃথিবীকে একটি কার্পেটের মতো বিছিয়ে দিয়েছি।” (সূরা দারিয়াত ৫১:৪৮)



১৪.২ কুরআনের সমস্যাসমূহ:

(১) পৃথিবীকে বিছানা বা কার্পেটের সাথে তুলনা

কুরআন বারবার বলছে, পৃথিবীকে বিছানো হয়েছে, কার্পেটের মতো করা হয়েছে, সমতল করা হয়েছে।

কিন্তু বাস্তবতা হলো:

বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে পৃথিবী একটি গোলাকার বস্তু (Oblate Spheroid), পুরোপুরি সমতল নয়।

যদি কুরআন বিজ্ঞানসম্মত হতো, তাহলে সেখানে পৃথিবীকে “একটি গোলক যা মহাকাশে ভাসছে” বলা হতো, কিন্তু তা বলা হয়নি।

বরং কুরআনের ভাষা এমন যে, মনে হয় এটি সমতল একটি স্থান।


(২) মুসলিম স্কলারের ভুল ব্যাখ্যা

আজকের মুসলিম পণ্ডিতরা বলেন, “কুরআন আসলে পৃথিবীকে গোলাকার বলেছে।” তারা সূরা নাযিয়াত ৭৯:৩০ এর শব্দ “দাহা” শব্দটিকে “ডিমের আকৃতি” বোঝায় বলে দাবি করেন।

কিন্তু সমস্যাগুলো হলো:

“দাহা” শব্দের অর্থ বিছানো বা প্রসারিত করা, ডিমের আকৃতি নয়।

কুরআনের অন্য জায়গায় বলা হয়েছে “পৃথিবীকে সমতল করা হয়েছে”, যা গোলাকার তত্ত্বের বিরুদ্ধে যায়।

ইসলামের স্বর্ণযুগের অনেক ব্যাখ্যাকারী (যেমন তাফসিরে ইবনে কাসির) পৃথিবীকে সমতল বলেই ব্যাখ্যা করেছেন।


(৩) ইসলামিক বিশ্বাসের ইতিহাস

ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুসলিমরা বিশ্বাস করত, পৃথিবী সমতল এবং পাহাড় দিয়ে একে স্থির রাখা হয়েছে।

ইমাম ইবনে কাসির বলেন, “আল্লাহ পৃথিবীকে সমতল করেছেন, যাতে মানুষ চলাফেরা করতে পারে।”

৯ম শতাব্দীতে মুসলিম দার্শনিকরা যখন গ্রিকদের গোলাকার পৃথিবীর ধারণা গ্রহণ করেন, তখন ইসলামী স্কলারদের মধ্যে মতবিরোধ শুরু হয়।


১৪.৩ বিজ্ঞান কী বলে?

২০০০ বছর আগেও গ্রিক বিজ্ঞানীরা জানতেন, পৃথিবী গোলাকার।

১৬৮৭ সালে নিউটন দেখান, পৃথিবী পুরোপুরি গোল নয়, বরং কিছুটা চ্যাপ্টা (Oblate Spheroid)।

মহাকাশ থেকে তোলা অসংখ্য ছবিতে দেখা গেছে, পৃথিবী গোলাকার, সমতল নয়।

কুরআনের ভাষা পৃথিবীকে সমতল বা বিছানো একটি স্থান হিসেবে চিত্রিত করে, যা বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল। মুসলিম স্কলারেরা আজকের যুগে কুরআনের আয়াতগুলোকে বিজ্ঞানের সাথে মেলানোর চেষ্টা করলেও, ইসলামের ইতিহাস দেখায় যে, ইসলামিক বিশ্বাসের ভিত্তিতেই পৃথিবীকে সমতল মনে করা হতো। যদি কুরআন সত্যিই বিজ্ঞানের চেয়ে এগিয়ে থাকত, তাহলে স্পষ্টভাবে পৃথিবীর গোলাকার আকৃতি এবং মহাবিশ্বের প্রকৃতি সম্পর্কে বলা থাকত, যা সেখানে নেই।


১৫. সূর্যাস্তের স্থান: কাদাযুক্ত জলাভূমি?

১৫.১ কুরআনের দাবি:

সূরা কাহাফে (১৮:৮৬) আল্লাহ যুলকারনাইন সম্পর্কে বলেছেন—

"অবশেষে, যখন সে সূর্যাস্তের স্থানে পৌঁছালো, তখন সে দেখলো যে সূর্য একটি কালো কাদাযুক্ত জলাশয়ে অস্ত যাচ্ছে..."

১৫.২ সমস্যাসমূহ:

(১) সূর্যের অস্ত যাওয়ার বাস্তবতা

বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে সূর্যের কোনো নির্দিষ্ট অস্ত যাওয়ার স্থান নেই।

পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘূর্ণন করে, তাই সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় শুধুমাত্র দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ঘটে।


(২) কুরআনের ভাষাগত সমস্যা

আয়াতে বলা হয়েছে, "সে দেখলো যে সূর্য কাদাযুক্ত জলাশয়ে অস্ত যাচ্ছে।"

অনেক ইসলামিক ব্যাখ্যাকারী বলেন, "এটি শুধু যুলকারনাইনের দৃষ্টিভঙ্গির বর্ণনা"—অর্থাৎ, তিনি এভাবে দেখেছিলেন।

কিন্তু আয়াতের ভাষা এমন যে, মনে হয় এটি প্রকৃত ঘটনা।


(৩) ইসলামের ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা

ইবনে কাসির (১৪শ শতকের ইসলামী স্কলার) তাঁর তাফসিরে বলেছেন, "সূর্য আসলেই জলাশয়ে ডুবে যায়।"

ইবনে আব্বাসের মতে, "সূর্য প্রতি রাতে আল্লাহর আরশের নিচে গিয়ে সিজদা দেয়, তারপর আবার উঠে আসে।" (সহিহ বুখারি ৩১৯৯, ৪৮০২)

আজকের মুসলিম স্কলাররা চেষ্টা করেন এই আয়াতকে রূপক হিসেবে ব্যাখ্যা করতে, কিন্তু ইসলামের প্রাথমিক যুগের স্কলাররা সরাসরি অর্থ গ্রহণ করতেন।


১৫.৩ বিজ্ঞান কী বলে?

সূর্য কখনোই কোনো জলাশয়ে ডোবে না।

এটি পৃথিবী থেকে ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে, এবং পৃথিবীর চারপাশে ঘূর্ণনের ফলে সূর্যাস্ত দেখা যায়।

এমনকি কোনো প্রাচীন সভ্যতার বিজ্ঞানও কখনো বলেনি যে সূর্য কোনো জলাশয়ে ডুবে যায়।

এখান থেকে স্পষ্ট হয় যে কুরআনের এই বর্ণনা বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল। ইসলাম প্রচারকরা যতই ব্যাখ্যা দিয়ে একে রূপক বলার চেষ্টা করুক, বাস্তবে এটি প্রাক-বৈজ্ঞানিক যুগের একটি বিশ্বাস। যদি কুরআন সত্যিই ঐশী গ্রন্থ হতো, তাহলে এখানে সূর্যের অস্ত যাওয়ার সত্য বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকত।

১৫. সূর্যাস্তের স্থান: কাদাযুক্ত জলাভূমি?

১৫.১ কুরআনের দাবি:

সূরা কাহাফে (১৮:৮৬) আল্লাহ যুলকারনাইন সম্পর্কে বলেছেন—

"অবশেষে, যখন সে সূর্যাস্তের স্থানে পৌঁছালো, তখন সে দেখলো যে সূর্য একটি কালো কাদাযুক্ত জলাশয়ে অস্ত যাচ্ছে..."

১৫.২ সমস্যাসমূহ:

(১) সূর্যের অস্ত যাওয়ার বাস্তবতা


বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে সূর্যের কোনো নির্দিষ্ট অস্ত যাওয়ার স্থান নেই।

পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘূর্ণন করে, তাই সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় শুধুমাত্র দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ঘটে।


(২) কুরআনের ভাষাগত সমস্যা

আয়াতে বলা হয়েছে, "সে দেখলো যে সূর্য কাদাযুক্ত জলাশয়ে অস্ত যাচ্ছে।"

অনেক ইসলামিক ব্যাখ্যাকারী বলেন, "এটি শুধু যুলকারনাইনের দৃষ্টিভঙ্গির বর্ণনা"—অর্থাৎ, তিনি এভাবে দেখেছিলেন।

কিন্তু আয়াতের ভাষা এমন যে, মনে হয় এটি প্রকৃত ঘটনা।


(৩) ইসলামের ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা

ইবনে কাসির (১৪শ শতকের ইসলামী স্কলার) তাঁর তাফসিরে বলেছেন, "সূর্য আসলেই জলাশয়ে ডুবে যায়।"

ইবনে আব্বাসের মতে, "সূর্য প্রতি রাতে আল্লাহর আরশের নিচে গিয়ে সিজদা দেয়, তারপর আবার উঠে আসে।" (সহিহ বুখারি ৩১৯৯, ৪৮০২)

আজকের মুসলিম স্কলাররা চেষ্টা করেন এই আয়াতকে রূপক হিসেবে ব্যাখ্যা করতে, কিন্তু ইসলামের প্রাথমিক যুগের স্কলাররা সরাসরি অর্থ গ্রহণ করতেন।


১৫.৩ বিজ্ঞান কী বলে?

সূর্য কখনোই কোনো জলাশয়ে ডোবে না।

এটি পৃথিবী থেকে ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে, এবং পৃথিবীর চারপাশে ঘূর্ণনের ফলে সূর্যাস্ত দেখা যায়।

এমনকি কোনো প্রাচীন সভ্যতার বিজ্ঞানও কখনো বলেনি যে সূর্য কোনো জলাশয়ে ডুবে যায়।

এখান থেকে স্পষ্ট হয় যে কুরআনের এই বর্ণনা বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল। ইসলাম প্রচারকরা যতই ব্যাখ্যা দিয়ে একে রূপক বলার চেষ্টা, বাস্তবে এটি প্রাক-বৈজ্ঞানিক যুগের একটি বিশ্বাস। যদি কুরআন সত্যিই ঐশী গ্রন্থ হতো, তাহলে এখানে সূর্যের অস্ত যাওয়ার সত্য বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকত।

১৬. ভ্রূণতত্ত্ব: আধুনিক বিজ্ঞান নাকি প্রাচীন ভুল ধারণা?
১৬.১ কুরআনের দাবি:

সূরা আল-মুমিনুন (২৩:১২-১৪) অনুযায়ী—
"আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির নির্যাস থেকে, তারপর তাকে শুক্রবিন্দুতে পরিণত করেছি নিরাপদ আশ্রয়ে, তারপর শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তে পরিণত করেছি, তারপর সেই জমাট রক্তকে মাংসপিণ্ড বানিয়েছি, এরপর সেই মাংসপিণ্ডকে হাড় বানিয়েছি এবং তারপর হাড়ের উপর মাংস পরিয়েছি, এরপর তাকে আরেক সৃষ্টি বানিয়েছি।"
১৬.২ সমস্যাসমূহ:
(১) জমাট রক্তের (عَلَقَة) ধারণা
এখানে "আলাকা" শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, যা সাধারণত জমাট রক্ত বোঝায়।
কিন্তু আধুনিক ভ্রূণতত্ত্ব অনুযায়ী ভ্রূণ কখনোই জমাট রক্ত হয় না।
ভ্রূণের শুরু থেকে রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থা গঠিত হতে শুরু করে এবং এটি কোনো সময়েই জমাট বাঁধা রক্ত থাকে না।
মিসকনসেপশন: প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থায় (যেমন: গ্যালেন) ধারণা ছিল যে ভ্রূণ জমাট রক্ত থেকে গঠিত হয়, যা কুরআনের ধারণার সাথে মিলে যায়।
(২) হাড় ও মাংস গঠনের ভুলক্রম
কুরআনে বলা হয়েছে, প্রথমে হাড় তৈরি হয়, তারপর তার ওপরে মাংস আসে।
কিন্তু বিজ্ঞান বলে, হাড় ও মাংস একসাথে গঠিত হয়, এবং মাংস আগে দেখা যায়।
ভ্রূণের কার্টিলেজ থেকে হাড়ের বিকাশ হয়, তবে সেটি মাংস ছাড়াই হয় না।
ভ্রূণের গঠন কুরআনের বর্ণনার সাথে মেলে না।
(৩) গ্রিক চিকিৎসার অনুকরণ
গ্যালেন (১৩০-২০০ খ্রিস্টাব্দ), একজন গ্রিক চিকিৎসাবিদ, বলেছিলেন যে ভ্রূণ তিন ধাপে গঠিত হয়: ১. জমাট রক্ত (Semen & blood mixture) ২. মাংসপিণ্ড (Flesh formation) ৩. হাড়ের বিকাশ (Bones & limbs)
কুরআনের বর্ণনা গ্যালেনের মতাদর্শের সাথে হুবহু মিলে যায়, যা প্রমাণ করে এটি কোনো ঐশী জ্ঞান নয় বরং প্রাচীন চিকিৎসার পুনরাবৃত্তি।
১৬.৩ বিজ্ঞান কী বলে?
ভ্রূণ প্রথমে একটি কোষগুচ্ছ হিসেবে গঠিত হয়, যা ধাপে ধাপে বিভাজিত হয় এবং নির্দিষ্ট অঙ্গ তৈরি করে।
হাড় ও পেশি একইসাথে গঠিত হয়, আলাদা নয়।
কোনো ধাপে ভ্রূণ জমাট রক্ত হয় না।

এটি স্পষ্ট যে কুরআনের ভ্রূণতত্ত্ব আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে মেলে না। এটি মূলত গ্যালেনের মতবাদের পুনরাবৃত্তি যা মুহাম্মদের সময়কার চিকিৎসাবিদদের জানা ছিল। তাই ইসলাম প্রচারকদের দাবি—"কুরআন আধুনিক ভ্রূণতত্ত্বের তথ্য দিয়েছে"—সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।


১৭. সূর্য ও চাঁদের গতি: বিজ্ঞানের সাথে অসঙ্গতি

১৭.১ কুরআনের দাবি:


কুরআনের বেশ কয়েকটি আয়াতে সূর্য ও চাঁদের গতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে—

১. সূরা ইয়াসিন (৩৬:৩৮-৪০):

"আর সূর্য নিজ কক্ষপথে চলতে থাকে, এটি পরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানীর নির্ধারিত বিধান। এবং চাঁদের জন্য আমি বিভিন্ন ধাপ নির্ধারণ করেছি, যতক্ষণ না তা পুরনো শুকনো খেজুর ডালের মতো হয়ে যায়। সূর্য কখনো চাঁদের সাথে মিলিত হতে পারে না, আর রাত কখনো দিনের আগে আসতে পারে না; প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে সাঁতার কাটছে।"

২. সূরা নূহ (৭১:১৫-১৬):
"তোমরা কি লক্ষ্য করো না কিভাবে আল্লাহ সাত আসমান সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে? এবং চাঁদকে করেছেন সেখানে আলো, আর সূর্যকে করেছেন প্রদীপ?"

১৭.২ সমস্যাসমূহ:

(১) সূর্য কি নিজ কক্ষপথে ঘোরে?

আয়াতে বলা হয়েছে সূর্য নিজ কক্ষপথে সাঁতার কাটছে।

বাস্তবে, সূর্যের নিজস্ব কোনো নির্দিষ্ট কক্ষপথ নেই বরং এটি গ্যালাক্সির কেন্দ্র ঘিরে প্রদক্ষিণ করছে, যা আমাদের দিনের-রাতের পরিবর্তনের কারণ নয়।

দিনের-রাতের পরিবর্তন ঘটে পৃথিবীর নিজ অক্ষে ঘূর্ণনের কারণে, কিন্তু কুরআনে এটি স্পষ্টভাবে বলা হয়নি।


(২) সূর্য ও চাঁদ কি একে অপরকে ধাওয়া করে?

এখানে সূর্য ও চাঁদের মাঝে সম্পর্ক বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে, যেন সূর্য চাঁদকে ধাওয়া করছে না।

কিন্তু বাস্তবতা হলো সূর্য ও চাঁদের গতি একে অপরের সাথে সম্পর্কিত নয়।

সূর্য নিজের কক্ষপথে গ্যালাক্সির কেন্দ্রের চারপাশে ঘোরে, আর চাঁদ পৃথিবীর চারপাশে।

কুরআনের ভাষা থেকে বোঝা যায় যেন সূর্য ও চাঁদ একসাথে কোনো নির্দিষ্ট কক্ষপথে চলছে, যা ভুল ধারণা।


(৩) চাঁদের আলো কি নিজস্ব?

সূরা নূহ (৭১:১৬)-তে বলা হয়েছে "চাঁদকে আলোকিত বস্তু বানানো হয়েছে, আর সূর্যকে প্রদীপ বানানো হয়েছে।"

এখানে চাঁদকে আলোর উৎস বলা হয়েছে, যা ভুল।

চাঁদ আসলে সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে, নিজস্ব আলো তৈরি করে না।


(৪) আকাশের সাত স্তর: বিজ্ঞান নাকি কল্পনা?

সূরা নূহ (৭১:১৫)-তে বলা হয়েছে "আল্লাহ সাত আসমান সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে"।

আধুনিক বিজ্ঞান অনুসারে, মহাবিশ্ব স্তরে বিভক্ত নয়।

কিছু ইসলামিক প্রচারক বায়ুমণ্ডলের স্তর (ট্রপোস্ফিয়ার, স্ট্রাটোস্ফিয়ার ইত্যাদি) দিয়ে এটি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন, কিন্তু এটি কুরআনের ব্যাখ্যার সাথে মিলেনা।


১৭.৩ বিজ্ঞান কী বলে?

সূর্য ও চাঁদের গতি আলাদা আলাদা।

সূর্য পৃথিবীর দিন-রাত নিয়ন্ত্রণ করে না, বরং পৃথিবীর নিজস্ব ঘূর্ণন দিনের-রাতের পরিবর্তন ঘটায়।

চাঁদের নিজস্ব আলো নেই, এটি কেবল সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে।

মহাবিশ্ব সাত স্তরে বিভক্ত নয়, বরং এটি একটি বিশাল, অবিন্যস্ত স্থান।

কুরআনের সূর্য ও চাঁদ সম্পর্কিত বর্ণনা আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক। এটি এমন একটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের ধারণা প্রতিফলিত করে যা প্রাচীন সভ্যতাগুলোর ভুল তত্ত্বের সাথে মিলে যায়। ফলে, "কুরআন আধুনিক বিজ্ঞানময় গ্রন্থ"—এই দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

১৮. মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ: কুরআনের ভুল ব্যাখ্যা
১৮.১ কুরআনের দাবি:

ইসলাম প্রচারকরা দাবি করেন যে কুরআন মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের কথা বলেছে। সাধারণত তারা নিম্নলিখিত আয়াতটি উল্লেখ করে—
সূরা আয-যারিয়াত (৫১:৪৭): "আর আমি আকাশকে আমার শক্তি দ্বারা সৃষ্টি করেছি এবং অবশ্যই আমি তা সম্প্রসারণ করছি।"
১৮.২ সমস্যা:
(১) অনুবাদের ভিন্নতা ও ভুল ব্যাখ্যা

এখানে মূল আরবি শব্দ "لموسعون" (lamūsiʿūna) ব্যবহৃত হয়েছে।
অনেক ইসলামিক স্কলার এবং অনুবাদকরা এই শব্দটির অর্থ করেছেন "আমি আকাশকে বিশাল বানিয়েছি", কিন্তু আধুনিক প্রচারকরা এটিকে "আমি সম্প্রসারণ করছি" বলে চালানোর চেষ্টা করেছেন।
প্রাচীন আরবি ভাষায় "মুসি’ঊন" শব্দটি সম্প্রসারণের পরিবর্তে "বিস্তৃত" অর্থে বেশি ব্যবহৃত হতো।
তাফসির ইবনে কাসির, আল-জালালাইন, এবং অন্যান্য প্রাচীন তাফসিরগুলোতেও মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের কোনো উল্লেখ নেই।
(২) কুরআনে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের সঠিক ব্যাখ্যা নেই
বিজ্ঞান অনুযায়ী, মহাবিশ্ব বিস্ফোরণের ফলে ক্রমাগত সম্প্রসারিত হচ্ছে (Big Bang Theory)।
কিন্তু কুরআনে বলা হয়নি যে আকাশ একসময় ছোট ছিল, পরে তা প্রসারিত হচ্ছে।
বরং এটি বোঝানো হয়েছে যে আকাশ বরাবরই বিশাল ছিল।
(৩) প্রাচীন ধারণার সাথে মিল
অনেক প্রাচীন সভ্যতা মনে করত আকাশকে ঈশ্বর প্রসারিত করেছেন।
মিশরীয়, ব্যাবিলনীয়, ও গ্রীক দর্শনেও ঈশ্বর আকাশকে বড় করেছেন—এমন বিশ্বাস পাওয়া যায়।
কুরআনের বর্ণনা এই পুরনো ভুল ধারণার পুনরাবৃত্তি মাত্র।


১৮.৩ বিজ্ঞান কী বলে?
১৯২৯ সালে বিজ্ঞানী এডুইন হাবল প্রথম দেখান যে মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে।
এটি আধুনিক টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।
কোনো ধর্মগ্রন্থই ১৯২৯ সালের আগে এই তথ্য দেয়নি, কুরআনও না।

কুরআনের ভাষ্যকে জোর করে আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে মেলানো হচ্ছে, অথচ প্রাচীন মুসলিম স্কলাররাও এই আয়াতকে সম্প্রসারণের প্রমাণ হিসেবে নেয়নি। তাই "কুরআন বিজ্ঞানের সাথে মিলে"—এটি একটি কৃত্রিম প্রচারণা মাত্র।


১৯. আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়া: বিজ্ঞানসম্মত নাকি সাধারণ জ্ঞান?

১৯.১ কুরআনের দাবি:
কুরআনে বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে যে আল্লাহ আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন—

সূরা আন-নাহল (১৬:৬৫):
"আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, এরপর এর দ্বারা তিনি মৃত ভূমিকে সঞ্জীবিত করেছেন।"

সূরা আর-রূম (৩০:৪৮):
"আল্লাহই সেই সত্তা যিনি বায়ু প্রবাহিত করেন, যা মেঘমালাকে উত্থিত করে, তারপর তিনি তা আকাশে যেভাবে ইচ্ছা ছড়িয়ে দেন এবং তাকে খণ্ড-বিখণ্ড করেন, এরপর তুমি দেখবে, তার মধ্য থেকে বারিধারা নির্গত হয়।"

১৯.২ সমস্যা:

(১) এই তথ্য সাধারণ জ্ঞান, কোনো অলৌকিক বিষয় নয়

প্রাচীন যুগের মানুষও জানত যে বৃষ্টি আকাশ থেকে পড়ে।

ব্যাবিলনীয়, গ্রীক, ভারতীয় সভ্যতার ধর্মগ্রন্থেও বৃষ্টির উল্লেখ আছে।

কুরআন এখানে বৃষ্টির উৎস বা কারণ কী—সেটা ব্যাখ্যা করেনি।


(২) ভুল ব্যাখ্যা

অনেক ইসলামিক প্রচারক দাবি করেন যে কুরআন জলচক্রের ব্যাখ্যা দিয়েছে।

কিন্তু কুরআনে বাষ্পীভবন, ঘনীভবন, এবং মেঘ গঠনের প্রক্রিয়া পরিষ্কারভাবে বলা হয়নি।

মেঘ থেকে বৃষ্টি হয়—এটি কুরআনের আগে থেকেই জানা বিষয়।


(৩) কুরআনের ত্রুটি: বৃষ্টি আল্লাহর ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল

বিজ্ঞান অনুযায়ী, বৃষ্টি হয় বাষ্পীভবন, ঘনীভবন ও নিম্নচাপের ফলে।

কিন্তু কুরআনে বলা হয়েছে আল্লাহ যখন চান, তখনই বৃষ্টি হয়।

এটি একটি ধর্মীয় ব্যাখ্যা, যা প্রকৃত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার সঙ্গে মেলে না।


১৯.৩ বিজ্ঞান কী বলে?

১৬৩০ সালে গ্যালিলিও গ্যালিলি ও পিয়েরি গ্যাসেন্ডি জলচক্রের প্রথম বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেন।

১৭৩৮ সালে ড্যানিয়েল বার্নুলি জলচক্রের গণিতগত ব্যাখ্যা দেন।

আধুনিক আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা নির্ভুলভাবে পূর্বাভাস দিতে পারেন কখন, কোথায়, কতটুকু বৃষ্টি হবে।

কুরআনে বৃষ্টির যে ব্যাখ্যা রয়েছে, তা প্রাচীন যুগের সাধারণ জ্ঞানের বাইরে কিছু নয়। এটি কোনো অলৌকিক বা আধুনিক বৈজ্ঞানিক তথ্য নয়। ইসলামিক প্রচারকরা জোর করে এটিকে বিজ্ঞানের সাথে মেলানোর চেষ্টা করছেন।


২০. পর্বত: পেরেক নাকি ভাসমান টেকটোনিক প্লেট?
২০.১ কুরআনের দাবি:
কুরআনে বলা হয়েছে যে আল্লাহ পৃথিবীকে স্থির রাখার জন্য পর্বত সৃষ্টি করেছেন, যাতে এটি কাঁপে না—
সূরা আম্বিয়া (২১:৩১) "আমি পৃথিবীতে স্থির পর্বত স্থাপন করেছি, যেন তা তাদের নিয়ে কাঁপে না।"
সূরা নাহল (১৬:১৫) "আর তিনি পাহাড় স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদের নিয়ে কেঁপে না উঠে।"
২০.২ সমস্যা:
(১) পর্বত পেরেক নয়, বরং ভাসমান
কুরআনে বলা হয়েছে, পর্বত পৃথিবীকে স্থির রাখে।
কিন্তু বিজ্ঞান বলে, পর্বত মাটির গভীরে ঢুকে থাকা পেরেকের মতো নয়, বরং এটি পৃথিবীর টেকটোনিক প্লেটের অংশ।
পর্বত আসলে ভাসমান প্লেটের কারণে গঠিত হয়।
(২) পর্বত ভূমিকম্প প্রতিরোধ করে না, বরং সৃষ্টি করে।
কুরআনের মতে, পর্বত পৃথিবীকে কম্পন থেকে রক্ষা করে।
কিন্তু বিজ্ঞান বলে, পর্বতের উৎপত্তি হয় টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষে, যা ভূমিকম্প সৃষ্টি করে।
হিমালয়, আন্দিজ, অ্যাপালাচিয়ান পর্বতমালা—সবই ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত।
(৩) টেকটোনিক প্লেট তত্ত্ব কুরআনের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে
১৯১২ সালে আলফ্রেড ওয়েগেনার কন্টিনেন্টাল ড্রিফট তত্ত্ব দেন, যা বলে যে ভূখণ্ডগুলো আসলে ভাসমান।
১৯৬০ সালে টেকটোনিক প্লেট তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই তত্ত্ব বলে, পর্বত তৈরি হয় প্লেটের ধাক্কা লাগার ফলে, যা ভূমিকম্পের অন্যতম প্রধান কারণ।
২০.৩ ইসলামিক প্রচারকদের প্রতারণা
ইসলাম প্রচারকরা দাবি করেন, পর্বত পেরেকের মতো নিচের দিকে প্রবিষ্ট।
আসলে পর্বত টেকটোনিক প্লেটের অংশ এবং পৃথিবীর অভ্যন্তরে কোনো "পেরেকের মতো" গঠন নেই।
তারা টেকটোনিক প্লেটের তত্ত্ব ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে ধর্মের পক্ষে প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা করেন।

কুরআনের দাবি অনুযায়ী পর্বত পৃথিবীকে স্থির রাখে, কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান বলে পর্বতই ভূমিকম্পের কারণ।
এটি প্রাচীন যুগের ভুল ধারণা ছিল, যা বিজ্ঞান দ্বারা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
কুরআনের তথ্য আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত নয় এবং এটিকে বিজ্ঞানের সাথে মেলানোর প্রচেষ্টা স্রেফ ধর্মীয় অপপ্রচার।

মনুষ্যত্ব জিন্দাবাদ! মনুষ্যত্ব হাফিজ!

Post a Comment

Previous Post Next Post