ভূমিকা:
মুহাম্মদ ও তার সাহাবীদের সামরিক অভিযান ও যুদ্ধনীতি ইসলামিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে এই অভিযানের মধ্যে অনেক ঘটনা রয়েছে যেখানে নীরিহ মানুষ, বেদুইন গোষ্ঠী, এবং নিরস্ত্র বন্দীদের হত্যা করা হয়েছিল। এমনকি, কিছু ঘটনায় নির্দোষ মানুষদেরও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এসব ঘটনার মধ্যে বনু মুস্তালিক, বনু কুরায়জা, বনু কায়নুকা, বনু নাজির, এবং অন্যান্য অনেক গোষ্ঠী অন্যতম ছিল। এই ব্লগে আমরা এসব ঘটনার বিস্তারিত বিশ্লেষণ করব, কুরআন ও হাদিস থেকে রেফারেন্সসহ।
১. বনু মুস্তালিক (যুদ্ধে নিহত নারী-শিশু সহ)
বনু মুস্তালিক নামে একটি আরব গোষ্ঠী ছিল যারা ইসলামের প্রথম দিকে মুহাম্মদের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। যুদ্ধের পর ৬২৬ খ্রিস্টাব্দে, মুহাম্মদ তাদের উপর আচমকা আক্রমণ করে, যখন তারা নিরস্ত্র ছিল। এই হামলায় অনেক নারী ও শিশুসহ ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে। নাবালকদের বন্দি করা হয়েছে। নাবালকদের পরিক্ষা করার জন্য তাদের কাপড় খুলে গোপনাঙ্গ পরীক্ষা করা হয়েছে। যাদের গোপনাঙ্গে লোম ছিল, তাদের হত্যা করা হয়েছে। বাকিদের বন্দি করা হয়েছে। ও নারীদেরকে গনিমতের মাল হিসেবে ধর্ষণ ও বিক্রি করেছে।
রেফারেন্স:
ইবনু ‘আউন (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাফি‘ (রহঃ) -কে পত্র লিখলাম, তিনি জওয়াবে আমাকে লিখেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বানী মুস্তালিক গোত্রের উপর অতর্কিতভাবে অভিযান পরিচালনা করেন। তাদের গবাদি পশুকে তখন পানি পান করানো হচ্ছিল। তিনি তাদের যুদ্ধক্ষমদের হত্যা এবং নাবালকদের বন্দী করেন এবং সেদিনই তিনি জুওয়ায়রিয়া (উম্মুল মু’মিনীন) -কে লাভ করেন।
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৫৪১
হাদিস (সুনান আবু দাউদ) অনুযায়ী, মুহাম্মদ নিজেই বন্দি নারী এবং শিশুদের মধ্যে ভাগ করে নেন, এবং তাদের অনেককে দাস হিসেবে বিক্রি করা হয়েছিল।
কুরআন 33:26-এ এই ধরনের যুদ্ধবিরোধী ঘটনাগুলোর ন্যায্যতা তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে অন্য ধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অনুমোদন দেওয়া হয়।
২. বনু কুরায়জা (একদিনে ৭০০ পুরুষকে জবাই করে হত্যা)
বনু কুরায়জা ছিল একাধিক ইহুদি গোষ্ঠী। ইসলামের সূচনালে, মুহাম্মদ তাদের বিরুদ্ধে অভিযানে গিয়েছিলেন। বনু কুরায়জার সদস্যরা মক্কার কুরাইশদের সাথে যুক্ত হয়ে মুহাম্মদ এবং তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিল।
এই সংঘর্ষের পর, বনু কুরায়িজার পুরুষদের, ৭০০ পুরুষদের জন্য গর্ত খনন করে তাদেরকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছিল, এবং নারীদেরকে সাহাবিদের মাঝে বিতরণ করা হয়। এবং শিশুদের বন্দি করে নেওয়া হয়।
হাদিস (সাহিহ মুসলিম 4363) এবং কুরআন 33:26 এ এই ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে মুহাম্মদ এর নির্দেশে পুরুষদের হত্যার অনুমোদন দেওয়া হয়। এবং বনু কুরায়জার নেতা হুয়াই ইবনে আখতাবের কন্যা সাফিয়াকে মুহাম্মদ ধর্ষণ করে বিয়ে করে। প্রথমে তো অন্য একজন সাহাবি তাকে নিয়ে গিয়েছিল। পরে মুহাম্মদ তাকে নিয়ে আসে।
৩. বনু কায়নুকা (বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতা)
বনু কায়নুকা ছিল আরেকটি ইহুদি গোষ্ঠী যারা মদিনায় বসবাস করত। তারা মুসলিমদের বাণিজ্যিক প্রতিযোগী ছিল এবং ইসলামের ভন্ডামির বিরুদ্ধে তারা অবস্থান করেছিল।
কুরআন 33:57 এবং সাহিহ মুসলিম 4363-এ এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বনু কায়নুকার সদস্যদের শাস্তি স্বরূপ, তাদের সমস্ত সম্পত্তি ছিনিয়ে নেওয়া হয় এবং মদিনা থেকে তাদের বিতাড়িত করা হয়।
৪. বনু নাজির (রহস্যজনক ষড়যন্ত্র)
বনু নাজির ছিল আরেকটি ইহুদি গোষ্ঠী যারা মুহাম্মদ এর বর্বরতার বিরুদ্ধে অবস্থান করেছিল। ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে, বনু নাজির গোষ্ঠীকে মদিনা থেকে বিতাড়িত করা হয় এবং তাদের সম্পত্তি গনিমতের মাল হিসেবে ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
কুরআন 59:2 এই ঘটনায় সাফভাবে উল্লেখ করেছে যে, গোষ্ঠীটির বিরোধিতা ইসলামিক সমাজের জন্য ক্ষতিকর ছিল, এবং তাদের থেকে মদিনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।
৫. কা'ব বিন আশরাফ (রহস্যজনক হত্যাকাণ্ড)
কা'ব বিন আশরাফ ছিল একজন ইহুদি কবি এবং নেতা, যিনি মুহাম্মদ এর বিরুদ্ধে সমালোচনামুলক কবিতা লিখেছিলেন। তিনি ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতি খোলামেলা বিরোধিতা করেছিলেন।
কা'ব বিন আশরাফের বিরুদ্ধে মুহাম্মদ এর নির্দেশে হত্যাকাণ্ড পরিচালিত হয়। এই হত্যাকাণ্ডের পর, মুহাম্মদ তার হত্যাকে "যুদ্ধের অংশ" হিসেবে বৈধ করেছিলেন।
হাদিস (সাহিহ বুখারি 3161) এ এই হত্যাকাণ্ডের বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়, যেখানে মুহাম্মদ এর নির্দেশে কা'বকে হত্যা করা হয়।
৬. আসমা বিনতে মারওয়ান
আসমা বিনতে মারওয়ান ছিলেন একজন মহিলা কবি, যিনি ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতেন। তার কবিতাগুলি মুহাম্মদ এর বিরুদ্ধে ছিল।
হাদিস (সাহিহ মুসলিম 4366) অনুযায়ী, মুহাম্মদ তার হত্যার নির্দেশ দেন, এবং এটি ছিল একধরনের প্রতিশোধ।
উপসংহার:
মুহাম্মদ এর সামরিক অভিযানগুলোর মধ্যে এমন ঘটনা স্বাভাবিক ছিল যেখানে নির্দোষ মানুষদের, বিশেষ করে বন্দীদের, নারীদের এবং শিশুদের হত্যাকাণ্ড ঘটে। এসব ইসলামী রীতি ও খেলাফতের প্রেক্ষাপটে গ্রহণযোগ্য ছিল, কিন্তু বর্তমানে এগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে দেখা হয়।
এগুলো কেবল ধর্মীয় ইতিহাসের অংশ নয়, বরং সামাজিক ও নৈতিক বিষয়ে বর্বরতার কেন্দ্রবিন্দু। পরবর্তীতে এই সমস্ত ঘটনার সমালোচনায় আমরা দেখি যে, ধর্মের নামে এই মরুর ডাকাত মুহাম্মদ কি ধরনের সহিংসতা মানবাধিকার ও নৈতিকতার সীমা লঙ্ঘন করেছে।
-মনুষ্যত্ব জিন্দাবাদ